পাতলা চুলের আকর্ষণীয় ১৪টি হেয়ার স্টাইল
মাথার চুল শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চুল মানুষের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে মানসিক ভাবে দৃঢ়তা দেয়। চুলের ধরন এবং স্টাইলের উপর ভিত্তি করে মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়।

মানুষের রুচি এবং ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে হেয়ার স্টাইলে। এটি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। পেশা এবং বয়স অনুযায়ী হেয়ার স্টাইল পছন্দ করতে হবে। চুলের স্টাইল মানুষের স্বাভাবিক জীবন কে প্রভাবিত করে।
চুল পাতলা এবং ঘন হয় মূলত জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপর। পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং হরমোনের প্রভাবে চুল পাতলা এবং ঘন হতে পারে। পাতলা এবং ঘন চুলের আলাদা আলাদা হেয়ার স্টাইল রয়েছে। আজকের ব্লগে পাতলা চুলের হেয়ার স্টাইল সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
পাতলা চুলের হেয়ার স্টাইল
লেয়ার কাট (Layer Cut)
পাতলা চুল ঘন দেখানোর জন্য লেয়ার কাট খুবই কার্যকর। এতে বিভিন্ন স্তরের চুল কাটতে হয়, ফলে ভলিউম বেশি মনে হয়। বিশেষ করে সামনের দিকে ছোট লেয়ার দিলে মুখের গঠন সুন্দর দেখায়। চুল খোলা রাখলেও স্টাইলিশ লাগে। এই হেয়ার স্টাইল ছোট বা মাঝারি চুলে ভালো মানায়। হালকা কার্ল করলে আরও ঘন ও ফ্রেশ লুক পাওয়া যায়।
বব কাট (Bob Cut)
বব কাট এমন একটি ছোট চুলের কাট যা পাতলা চুলে খুব ভালো মানিয়ে যায়। এই হেয়ার স্টাইলে চুল কানের একটু নিচে পর্যন্ত থাকে। এতে চুল কম হলেও ঘন দেখায়। ফেস ফ্রেমিং ইফেক্টের জন্য এটি খুবই কার্যকর। সহজে সাজানো যায় এবং খুব হালকা লাগে। অনেকে সামনের দিকটা একটু লম্বা রেখে কাট করায়, যেটাকে অ্যাঙ্গেল বব বলে। বব কাট কিশোরী থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মেয়েদের জন্য মানানসই।

লং বব (Long Bob)
যারা খুব ছোট চুল চান না, কিন্তু পাতলা চুলের জন্য কিছু পরিবর্তন চান। তাদের জন্য লং বব আদর্শ। এই হেয়ার স্টাইলে চুল কাঁধ পর্যন্ত রাখা হয়। স্ট্রেইট, কার্লি যেকোনো ধরনের চুলেই ভালো মানায়। এটি হালকা ভলিউম এনে দেয় এবং মুখের গঠন সুন্দরভাবে হাইলাইট করে। হেয়ার ড্রায়ার বা রোলার ব্যবহার করে সহজেই স্টাইলিশ লুক তৈরি করা যায়। সহজে মেইনটেইন করা যায় বলে এটি অনেক জনপ্রিয়।
সাইড পার্টিং (Side Parting)
চুলের পার্টিং ছোট একটি পরিবর্তন হলেও, এটি পুরো লুক বদলে দিতে পারে। সাইড পার্টিং করলে চুল একদিকে ভলিউম পায় এবং পাতলা চুল ঘন দেখায়। পাশাপাশি মুখের একপাশ ঢাকা পড়ে, ফলে লুক আরও স্টাইলিশ হয়। চুল খোলা রাখার সময় বা পনিটেল করার সময়েও সাইড পার্টিং দারুণ মানিয়ে যায়। ফ্ল্যাট চুলে একটু পাফ বা হালকা কার্ল যোগ করলে আরও আকর্ষণীয় দেখায়।

সামনের চুলে কাট (Bangs)
সামনের দিকে ব্যাঙ্গস কাটে পাতলা চুলে ভলিউম আসে এবং মুখে একটি কিউট লুক পাওয়া যায়। এই স্টাইলে কপালের উপর চুল রাখা হয়, যা লুকের মাঝে ভিন্নতা আনে। ফ্রিঞ্জ স্টাইল সাধারণত ছোট বা মাঝারি চুলে ভালো মানায়। এই কাটে চোখের উপর হালকা চুল থাকায় চোখ আরও আকর্ষণীয় দেখায়। চুলের ঘনত্বের অভাব ঢেকে দিতে দারুণ সাহায্য করে।
পাফ হেয়ার স্টাইল (Puff Style)
পাফ হেয়ার স্টাইল পাতলা চুলে হালকা ভলিউম এনে দেয়। এই স্টাইলে সামনের দিকের কিছু চুল তুলে পেছনে ক্লিপ বা পিন দিয়ে আটকে রাখা হয়। ফলে চুলের সামনের অংশ একটু উঁচু হয় এবং মাথার উপরের অংশে ঘন দেখায়। পনিটেল, বেণি বা খোলা চুলের সাথেও পাফ স্টাইল করা যায়। এটি খুব সহজ একটি স্টাইল, তবে লুককে অনেক পরিপাটি ও স্মার্ট করে তোলে।

হাফ আপ হাফ ডাউন স্টাইল
এই স্টাইলে চুলের অর্ধেক অংশ উপরে তুলে বেঁধে ফেলা হয় আর বাকি অংশ খোলা থাকে। এতে চুল দেখতে ঘন মনে হয় এবং স্টাইলিশও লাগে। পাতলা চুল হলে উপরের অংশে একটু টিজ করে বা কার্ল করে হাফ আপ স্টাইল করলে আরও সুন্দর দেখা যায়। পার্টি, ক্যাজুয়াল বা ঘরের সাধারণ সাজে এই হেয়ার স্টাইল বেশ মানিয়ে যায়। হেয়ার ক্লিপ, রাবার ব্যান্ড বা ছোট বাটি ক্লিপ দিয়ে সাজানো যায়।
বেণি (Loose Braids)
পাতলা চুলে টাইট বেণি করলে চুল আরও পাতলা দেখায়। কিন্তু ঢিলা বা লুজ ব্রেইড করলে চুল ঘন ও নরম লাগে। এই স্টাইলে চুল হালকা টান দিয়ে বেণি করে রাখা হয়। চাইলে সামনের কিছু চুল ফেলে মুখ ফ্রেম করা যায়। এক পাশে ঝুলিয়ে বেণি করলে আরও স্টাইলিশ লাগে। স্কুল, কলেজ বা হালকা ফ্যাশনের জন্য এই স্টাইল উপযুক্ত।

মেসি বান (Messy Bun)
মেসি বান এমন এক স্টাইল যেখানে চুল গোছানো না দেখিয়ে হালকা এলোমেলো করে বান করা হয়। এই স্টাইল চুলকে ঘন দেখায় এবং স্টাইলিশ ফিল দেয়। এটি পাতলা চুলের জন্য একদম পারফেক্ট কারণ এতে চুলের ঘনত্ব না থাকলেও সমস্যা হয় না। মেসি বান তৈরি করতে চুল টুইস্ট করে এলোমেলোভাবে পেছনে ক্লিপ বা রাবার দিয়ে বাঁধা হয়। হালকা পাফ বা সামনের চুল খুলে রাখলে লুক আরও সুন্দর হয়।

পনিটেল উইথ ভলিউম (High Ponytail with Volume)
সাধারণ পনিটেলের চেয়ে হাই পনিটেল পাতলা চুলে ভালো মানায় যদি উপরের অংশে একটু পাফ করে সেট করা হয়। এতে মাথার উপরের দিক ঘন দেখায়। হাই পনিটেল দেখতে স্মার্ট এবং ক্লিন লাগে। স্কুল, অফিস বা ডেইলি লুকে এটি খুবই কার্যকর। চাইলে চুলের এক অংশ পনিটেলের চারপাশে ঘুরিয়ে রাবার ঢেকে দিলে আরও সুন্দর লাগে

স্লিক লো বান (Sleek Low Bun)
স্লিক লো বান এমন একটি হেয়ার স্টাইল যেখানে চুল সরু করে পেছনে নিয়ে নিচু বান করে গুছিয়ে বাঁধা হয়। এই স্টাইলে মাথার পাশের চুলগুলো ভালোভাবে চ্যাপ্টা করে সেট করা হয়, ফলে খুব পরিপাটি ও স্মার্ট দেখায়। পাতলা চুলে এই স্টাইল করলে চুল কম মনে হয় না বরং ক্লাসি ও এলিগ্যান্ট লুক আসে। অফিস, ফরমাল মিটিং বা উৎসবের সাজে খুব মানিয়ে যায়। হেয়ার জেল বা স্প্রে দিয়ে চুল স্থির রাখা হয় যাতে স্লিক লুক বজায় থাকে।

লেয়ারড পনিটেল (Layered Ponytail)
লেয়ারড পনিটেল মানে হচ্ছে লেয়ার কাট করা চুল দিয়ে পনিটেল বানানো। এতে চুলের ভলিউম দেখা যায়, ফলে পাতলা চুলও ঘন দেখায়। এই স্টাইলে হালকা কার্ল বা ওয়েভ থাকলে আরও সুন্দর লাগে। চাইলে সামনের কিছু লেয়ার খোলা রেখে মুখ ফ্রেম করা যায়। এটি সহজ, দ্রুত ও নানান অনুষ্ঠানে মানিয়ে যাওয়ার মতো একটি হেয়ার স্টাইল। স্কুল, কাজ বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পরার জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়তে পারেন: জনপ্রিয় মেকআপ প্রোডাক্টস নাম লিস্ট
কার্ল (Soft Curl )
পাতলা চুলে কার্ল করে নিলে চুল ঘন দেখায় এবং অনেক স্টাইলিশও লাগে। হালকা ঢেউ বা বড় বড় কার্ল চুলে প্রাণ এনে দেয়। এটি ঘরে হেয়ার রোলার বা হিটিং টুল ব্যবহার করেও করা যায়। কার্ল চুল খোলা রেখেও স্টাইল করা যায়, আবার বান করেও মানায়। বিশেষ দিনে, পার্টিতে কিংবা ছবিতে ভালো লুক আনতে এটি খুবই কার্যকর। কার্ল করলে চুলের লাইট রিফ্লেকশন ভালো হয়।

ডাবল বান (Double Buns)
ডাবল বান মানে মাথার দুই পাশে দুটি ছোট বান বানানো। একে স্পেস বান বলা হয়। এই স্টাইল সাধারণত কিউট এবং তরুণ লুক এনে দেয়। পাতলা চুলে দুই পাশে বান করলে চুল অনেকটা ভলিউম পায়। স্কুল, কলেজ বা ঘরে পার্টি লুকের জন্য দারুণ মানায়। চাইলে চুল হালকা কার্ল করে তারপর বান বানালে আরও ঘন মনে হয়।

শেষকথা
মুখের গঠন, আকৃতি এবং অনুষ্ঠান বা উপলক্ষের উপর নির্ভর করে হেয়ার স্টাইল সিলেক্ট করতে হবে। সব জায়গায় সব স্টাইল দেওয়া যাবে না। পাতলা চুলে যদি স্টাইল বেশি না করতে চান, তাহলে শুধু হেয়ার ক্লিপ, ব্যান্ড, বা পিন দিয়েই চমৎকার সাজ তৈরি করা যায়। বড় বা রঙিন ক্লিপ, পার্ল ক্লিপ বা ফুলের ক্লিপ পাতলা চুলে নজরকাড়া লুক আনে। এগুলো দিয়ে পনিটেল, হাফ আপ বা খোলা চুলেও ভিন্ন স্টাইল আনা যায়। বিশেষ করে ফ্যাশনেবল হেয়ার ক্লিপ ব্যবহার করলে সহজেই ট্রেন্ডি লুক পাওয়া যায়। যাদের চুল কম, তারা হেয়ার অ্যাক্সেসরিজ দিয়ে লুকটা ভারসাম্য করতে পারেন।