স্নেক প্লান্টের উপকারিতা ও যত্ন
সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা ফেলে স্নেক প্লান্ট দীর্ঘদিন বেছে থাকবে এবং আপনার ঘর অথবা অফিসে পরিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করবে।

ঘরের বায়ু পরিশোধনকারী একটি আদর্শ উদ্ভিদ হচ্ছে স্নেক প্লান্ট। ঘরের বাতাসে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন চুষে নিয়ে বাতাসকে রাখে বিশুদ্ধ।
চমৎকার একটি ইনডোর প্লান্ট হচ্ছে স্নেক প্লান্ট। এই গাছকে সানসেভেরিয়া (Sansevieria) বলা হয়ে থাকে। তলোয়ারের আকৃতির মত হয়ে থাকে স্নেক গাছের পাতাগুলো।
স্নেক প্লান্টের উচ্চতা খুব বেশি হয় না। ৬ থেকে ১০ ফিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এই গাছ। এই গাছ ঘরের বাতাস কে বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি ঘর কে রাখে শীতল এবং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে বহুগুণে।
এই ব্লগে স্নেক প্লান্টের পরিচর্যা এবং উপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করলাম।
স্নেক প্লান্টের উপকারিতা
বাতাস বিশুদ্ধ রাখে
স্নেক প্লান্ট ঘরের বাতাস কে বিশুদ্ধ রাখে। বাতাসে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ শোষণ করে ঘরকে রাখে সতেজ এবং বায়ুবাহিত রোগ থেকে মুক্তি প্রদান করে।
স্নেক প্লান্ট প্রতিনিয়ত বাতাসকে ফিল্টার করতে থাকে। বাতাসে থাকা টক্সিন নিমিষেই চুষে নিয়ে বাতাস কে রাখে বিশুদ্ধ। অর্থাৎ স্নেক প্লান্ট আমাদের বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।
ঘরের শোভা বৃদ্ধি করে
ঘরের যে কোনো স্থানে রাখতে পারেন এই গাছ। বেডরুম, বারান্দা অথবা ড্রয়িংরুম যেকোনো স্থানে রাখতে পারেন। বিশেষ করে বেডরুমে রাখতে পারেন। বুক শেলফ অথবা টেবিলের উপর রাখতে পারেন এই গাছ। যেকোনো স্থানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে দ্বিগুণ৷
আজকাল ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ব্যাপকহারে ইনডোর প্লান্টের ব্যবহার হয়ে আসছে। বারান্দা অথবা ঘরের যেকোনো স্থানকে প্রাণবন্ত করে তুলতে অন্যান্য গাছের সাথে রাখতে পারেন একটি স্নেক প্লান্ট। এই গাছ ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে বহুগুণে।

বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না
স্নেক প্লান্ট অন্ধকার এবং আলো উভয়ই সহ্য করতে পারে। যেকোনো পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে পারে এই উদ্ভিদ। মূলত এজন্যই স্নেক প্লান্ট সবার কাছে জনপ্রিয়।
বর্ষার মৌসুম এবং তীব্র গরমে ভালো থাকে স্নেক প্লান্ট। এই গাছের ঘন ঘন পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন হয় না। স্নেক প্লান্ট যেকোনো পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে পারে। এই গাছের রক্ষণাবেক্ষণ খুবই সহজ৷
মানসিক চাপ কমায়
সারাদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ থাকে প্রচুর। ঘর অথবা অফিসে মানসিক চাপ দূর করার জন্য রাখতে পারেন স্নেক প্লান্ট। এই গাছ বাতাস বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি মানসিক চাপ কমায়। ঘরের মধ্যে এই গাছ থাকলে অ্যালার্জির প্রভাব কমাতে পারে। মানসিক প্রশান্তির জন্য কম খরচে একটি স্নেক প্লান্ট ঘরে রাখতে পারেন।
রোগ নিরাময় করে
স্নেক প্লান্ট বায়ুবাহিত রোগব্যাধির প্রভাব কমাতে কার্যকারী। এই গাছের পাতা ক্ষত এবং পোড়া নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও মাথাব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, কাটা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কার্যকরী।
ইনডোর প্লান্ট সম্পর্কে আরও পড়তে পারেন: মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা ও যত্ন
স্নেক প্লান্ট গাছের যত্ন
কম পরিচর্যায় যে-সব ইনডোর প্লান্ট বেঁচে থাকতে পারে তার মধ্যে স্নেক প্লান্ট অন্যতম। পানি এবং খরা উভয়ই ভালোভাবে সহ্য করতে পারে এই গাছ। স্নেক প্লান্টের সহজ কিছু পরিচর্যা তুলে ধরা হলো-
পর্যাপ্ত আলো বাতাসে রাখুন
স্নেক প্লান্ট যেকোনো পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে পারে, তবে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন। দীর্ঘক্ষণ সূর্যের আলোতে রাখলে গাছের পাতা পুড়ে যেতে পারে। আলো বাতাস চলাচল করে এসব জায়গায় এই গাছ রাখতে পারেন।
নিয়মিত পানি দেওয়া
অতিরিক্ত পানি গাছের শেকড় নষ্ট করে, তাই পানি বেশি দেওয়া উচিত নয়। মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করে গ্রীষ্মকালে ৭-১০ দিনে ১ বার পানি দিন।
স্নেক প্লান্ট পানি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। অতিরিক্ত পানি এই গাছের জন্য বিপজ্জনক। শীতকালে মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করে ১৫-২০ দিনে একবার পানি দিন।

আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা
স্নেক প্লান্ট পানি এবং খরা যেকোনো পরিস্থিতিতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তবে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে রাখা যাবে না। অতিরিক্ত ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না এই গাছ। আর্দ্রতা বেশি থাকে এসব জায়গায় রাখা যাবে না। সব সময় ভেজা থাকে এমন জায়গায় এড়িয়ে যাওয়া উত্তম।
বড় পাত্রে রাখুন
যে পাত্রে স্নেক প্লান্ট রাখবেন সেটি যেন তুলনামূলক একটু বড় পাত্র হয়। বড় পাত্র হলে গাছের শেকড় সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায়। পাত্রে ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে। পানি যেন আটকে না থাকে। ছিদ্রযুক্ত পাত্র নির্বাচন করুন।
সার প্রয়োগ
স্বল্প পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে পারেন। খুব বেশি প্রয়োজন নাহলে সার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন। বছরে ৩ থেকে ৪ বার সার দিতে হবে। স্নেক প্লান্টের জন্য জৈব সার ব্যবহার করতে পারেন। মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করে সার দিতে হবে। শীতকালে সার দেওয়া যাবে না।
পোকামাকড় থেকে মুক্ত রাখুন
পোকামাকড় যে কোনো গাছের জন্য ক্ষতিকর। পোকামাকড় দূর করতে পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে স্নেক প্লান্টের পাতা মুছে দিন৷ কিছুদিন পরপর গাছের পাতায় স্প্রে করে দিতে পারেন।

স্নেক প্লান্টের বৈশিষ্ট্য
- স্নেক প্লান্ট খুব বেশি বড় হয় না। ৬ থেকে ১০ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
- স্নেক প্লান্টের পাতা শক্ত, খাড়া এবং তলোয়ার আকৃতির হয়ে থাকে। এই গাছের পাতা মোমের মতো লম্বা এবং শক্ত হয়
- এই গাছের পাতা সাধারণত সবুজ এবং হলুদ রঙের হয়ে থাকে।
- কাটিং করে খুব সহজেই নতুন চারা গাছ উৎপাদন করা যায়।
স্নেক প্লান্টের জন্য উপযুক্ত মাটি তৈরি করুন
- স্নেক প্লান্টের জন্য মাটি তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গাছ অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না। এমনভাবে মাটি তৈরি করুন যাতে মাটি পানি নিষ্কাশন করতে পারে।
- মাটির সাথে ২৫% থেকে ৩০% বালু মেশাতে হবে। পানি ধারণ করার ক্ষমতা কমানোর জন্য অবশ্যই বালু মেশাতে হবে।
- জৈব সার অথবা কম্পোস্ট সার মেশাতে হবে। গাছের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য জৈব সার খুবই উপযোগী।
- সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে মাটি তৈরি করতে হবে। মাটিকে ঝুরঝুরে এবং নরম করে তৈরি করুন।
স্নেক প্লান্টের জন্য উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন
স্নেক প্লান্টের পাত্র নির্বাচন করা খুব জরুরি। স্নেক প্লান্টের জন্য পাত্র নির্বাচন সম্পর্কে কিছু আইডিয়া দেওয়া হলো-
- স্নেক প্লান্টের জন্য মাটির পাত্র সেরা পছন্দ। মাটির পাত্র পানি শোষণ করে জলাবদ্ধতা থেকে গাছকে রক্ষা করবে।
- প্লাস্টিকের পাত্রের নিচে ছিদ্র করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ওজনে খুব হালকা হয়ে থাকে। প্লাস্টিকের পাত্র পানি নিষ্কাশন করতে পারে না। তাই পাত্রের তলায় ছিদ্র করে দিতে হবে।
- সিরামিকের পাত্র থেকে পানি বের হওয়ার সুযোগ থাকে না। আর্দ্রতায় গাছের শেকড় পচে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। ছিদ্র যুক্ত সিরামিকের পাতিল হতে পারে সেরা পছন্দ।
শেষ কথা
স্নেক প্লান্ট দীর্ঘস্থায়ী এবং কম যত্নে বেড়ে ওঠা গাছগুলোর একটি। মাটির সুন্দর মিশ্রণে স্নেক প্লান্ট সুন্দর এবং সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠবে। সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা ফেলে স্নেক প্লান্ট দীর্ঘদিন বেছে থাকবে এবং আপনার ঘর অথবা অফিসে পরিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করবে।