পিস লিলি গাছের পরিচর্যা
ঘরের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে পিস লিলি গাছ। খুব বেশি যত্ন নিতে হয় না এই গাছের।

পিস লিলি বাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পিস লিলি গাছের যত্ন খুব বেশি নিতে হয় না। সঠিক যত্ন ফেলে এই গাছ বেঁচে থাকে অনেক দিন।
ঘরের বাতাস থেকে ক্ষতিকর টক্সিন শোষণ করে বাতাস কে বিশুদ্ধ রাখে পিস লিলি। ঘরে এবং বাহিরে দুই স্থানে রাখতে পারেন পিস লিলি। ঘরের হালকা আলোতে বাধাহীনভাবে বেড়ে উঠে পিস লিলি। এটির জন্য সরাসরি সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয় না। ঘরের কৃত্রিম আলোতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
পিস লিলি গাছের ইংরেজি নাম হচ্ছে spathiphyllum (স্প্যাথিফিলাম)। সাদা ফুলের এই গাছের রয়েছে বিভিন্ন উপকারিতা। পিস লিলি গাছের জন্য অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না।
ঘরের জন্য শান্তির ইনডোর প্লান্ট হচ্ছে পিস লিলি। এটি বাসার ভিতরে আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। পিস লিলি গাছের যত্ন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো-
পরোক্ষ সূর্যের আলো এবং বাতাস
যেকোনো ইনডোর প্লান্টের জন্য সরাসরি সূর্যের আলো ক্ষতিকর। পিস লিলি ও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই পিস লিলি গাছ আলো বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখতে হবে। তবে একদম অন্ধকার স্থানে এই গাছ রাখা যাবে না। তাহলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
নিয়মিত পানি দেওয়া
পিস লিলি গাছের জন্য মাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি পানি দেওয়া যাবে না। পানি বেশি দিলে গাছের শেকড় পঁচে যাবে। সেজন্য মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করে মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে। গরমকালে সপ্তাহে ২-৩ বার এবং শীতকালে মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে।
পাতা ছাঁটাই এবং পরিষ্কার রাখুন
গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে সেগুলো ছাঁটাই করে ফেলুন। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন গাছের কোন ক্ষতি না হয়। গাছের পাতায় ময়লা আবর্জনা অথবা ধুলাবালি জমলে সেগুলো নরম শুকনো ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় প্রতিরোধ
পিস লিলির পাতায় পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখলে নিম পাতার স্প্রে করে নিন। মাঝে মধ্যে গাছের পাতা পরিক্ষা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। গাছের পাতার আগা যদি বাদামি হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন গাছে কম বা বেশি পানি দেওয়া হচ্ছে।
সার প্রয়োগ
পিস লিলি গাছে অতিরিক্ত সার দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত সার দিলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাবে। এই গাছে মাসে একবার তরল সার প্রয়োগ করলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা
গরম বাতাসে পিস লিলির পাতা বাদামি হয়ে যেতে পারে, তাই মাঝে মাঝে গাছের পাতায় স্প্রে করুন। পিস লিলি অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং অতিরিক্ত গরম কোনোটাই পছন্দ করে না।
পিস লিলির মাটি তৈরি
বেলে দোআঁশ মাটিতে পিস লিলি গাছ লাগান। পিস লিলি গাছের মাটিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। জৈব সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করলে হয়। ড্রেনেজের জন্য দোআঁশ মাটির সাথে ১৫% বালি যোগ করতে হবে।
আরও পড়তে পারেন: গরমে ঘর ঠান্ডা রাখে যেসব ইনডোর প্লান্ট
পিস লিলি গাছে ফুল ফুটছে না
জিবেরেলিক অ্যাসিড
জিবেরেলিক অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক জৈব যৌগ। জিবেরেলিক অ্যাসিড দ্রুত বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারণ এবং ফলন বৃদ্ধিতে অতি অল্প মাত্রায় ব্যবহারে অত্যন্ত কার্যকর একটি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক। গাছের ফুল ফুটাতে সাহায্য করে এবং ফুল ও ফল ঝরা বন্ধ করে এবং গাছের কাণ্ড দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফুল ও ফলকে আকর্ষণীয় করে।
ফসফরাস সার
ফসফরাস সার গাছের কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে। গাছের মূল বা শিকড় গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই সার গাছের কাঠামো শক্ত করে এবং গাছকে নেতিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে থাকে। ফুল, ফল ও বীজের গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।
ঘরোয়া টিপস
ঘরোয়া টিপস অনুসরণ করে পিস লিলি গাছে ফুল ফোঁটা সম্ভব। পিস লিলি গাছটি কে কিছুদিন অন্ধকারে রেখে দিন। কিছুদিন অন্ধকারে রেখে দিয়ে তারপর আলোতে আনুন। কিছুদিন পর আবার সেইম প্রক্রিয়া টি করুন। এভাবে দেড় থেকে দুই মাস করতে থাকুন। তাহলে আপনার পিস লিলিতে ফুল আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
পিস লিলি গাছের দাম
দেশের জনপ্রিয় ইনডোর প্লান্টগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পিস লিলি। বর্তমানে পিস লিলি গাছ দেশের সকল নার্সারিতে পাওয়া যায়। এছাড়াও অনলাইনে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই গাছ বিক্রি করে যাচ্ছে।
বড় সাইজের ঝোপালো গাছ ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে এবং ছোট এবং মাঝারি সাইজের গাছ ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
শেষকথা
পিস লিলি গাছের যত্ন খুব বেশি নিতে হয় না। খুব সহজেই টবের মধ্যে বেড়ে উঠে এই গাছ। ৩-৫ দিনে একবার পানি দিলে ভালো থাকে এই গাছ। কৃত্রিম আলোতেও ভালো থাকে এই গাছ। যারা গাছের যত্ন নিতে আলসেমিতে ভোগেন তাদের জন্য এই গাছ উপযুক্ত।