অপরাজিতা গাছের উপকারিতা ও যত্ন

প্রকৃতির অদ্ভুত সুন্দর এবং উপকারী ফুল গাছ হচ্ছে অপরাজিতা ফুল গাছ। চমৎকার একটি ফুল গাছ অপরাজিতা। এই গাছে নীল, বেগুনি, গোলাপি এবং সাদাসহ আরো বিভিন্ন রঙের ফুটে। এক পাপড়ির এই ফুলে রয়েছে অনেক ভেষজ উপকারিতা। এটি একটি ঔষধি গাছও বটে। রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে এই গাছ।  অসাধারণ একটি ইনডোর প্লান্ট অপরাজিতা। লতানো এই গাছ…

অপরাজিতা গাছের উপকারিতা ও যত্ন

প্রকৃতির অদ্ভুত সুন্দর এবং উপকারী ফুল গাছ হচ্ছে অপরাজিতা ফুল গাছ। চমৎকার একটি ফুল গাছ অপরাজিতা। এই গাছে নীল, বেগুনি, গোলাপি এবং সাদাসহ আরো বিভিন্ন রঙের ফুটে। এক পাপড়ির এই ফুলে রয়েছে অনেক ভেষজ উপকারিতা। এটি একটি ঔষধি গাছও বটে। রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে এই গাছ। 

অসাধারণ একটি ইনডোর প্লান্ট অপরাজিতা। লতানো এই গাছ ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। লতানো গাছ হিসেবে বারান্দা অথবা ঘরের বেডরুম বা ড্রয়িং রুমের কর্নারে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। টব অথবা শেলফের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখলে বেডরুমে প্রশান্তিময় পরিবেশ তৈরি হয় 

অপরাজিতা গাছের উপকারিতা

ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দারুণ ভেষজগুণ রয়েছে অপরাজিতা ফুলের। অ্যাজমা, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং হজমের সাহায্য সহ আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে এই গাছের। 

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে

অপরাজিতা ফুলের চা থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হয় যা রক্তনালিকে শান্ত রাখে। এটি অতিরিক্ত রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তনালী কে শিথিল রাখে। যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অপরাজিতা ফুলের চা সাহায্য করে। খাবার খাওয়ার আগে অপরাজিতা ফুলের চা পান করলে তা শরীরে গ্লুকোজ শোষণে বাধা দেয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। 

অপরাজিতা ফুল

মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করে

মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে অপরাজিতা গাছের শেকড় ব্যবহার করতে পারেন। অপরাজিতা গাছের শেকড় ভালোভাবে পিষে ৫ থেকে ৬ ফোঁটা নাকের মধ্যে দিলেই হয়ে যায়। এটি খুবই কার্যকরী। 

ত্বকের যত্ন

অপরাজিতা ফুল বেটে তার সাথে চন্দন এবং দই মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে তা দিয়ে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। এটি ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব সহজেই করে নিতে পারেন। 

ওজন নিয়ন্ত্রণ

শরীরের চর্বি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে অপরাজিতা ফুল। অপরাজিতা ফুলের চা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে৷ 

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করে

অপরাজিতা ফুলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি। এটি শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে এবং বুকে জমে থাকা কফ সহজে বের হয়ে আসে। অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের জন্য বিশেষ সহকারী। 

হজমে সহায়তা করে

অপরাজিতা ফুলের চা মল নিষ্কাশনের সাহায্য করে। এটি সুস্থ পরিপাকতন্ত্রে সাহায্য করে। এই ফুলের চা মানুষের হজমের জন্য বেশ উপকারী।  

কোষ্ঠকাঠিন্য 

অপরাজিতা ফুল পেটের সমস্যা দূর করে। সাদা বা নীল অপরাজিতা ফুলের বীচি গুঁড়ো করে হালকা চিনি মিশিয়ে পানি দিয়ে খেতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়া ভালো। 

অপরাজিতা ফুল

অপরাজিতা গাছের যত্ন 

বহুবার্ষিক গাছ হচ্ছে অপরাজিতা গাছ। কম যত্নে দীর্ঘদিন ভালো থাকে এই গাছ। লতানো এই গাছ সাধারণত বেড়া, গেট অথবা মাচা বেয়ে উপরে উঠে। 

মাটি

মাটি যেকোনো গাছের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে মাটির উপর। দোআঁশ মাটিতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় অপরাজিতা গাছ। এই গাছের মাটি তৈরি করার সময় কাদামাটি এবং জৈবসার মিশ্রণ করতে হবে। 

পানি

অতিরিক্ত পানি অপরাজিতা গাছের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত পানি গাছের আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে যা অপরাজিতা গাছের শেকড় পচে যায় এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এজন্য অপরাজিতা গাছ পানি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে। 

আলো

অপরাজিতা গাছের জন্য সূর্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের আলো ছাড়া এই গাছে ফুল বেশি আসে না। সূর্যের আলোতে ভালো থাকে এই গাছ। ছায়াযুক্ত জায়গায় বেঁচে থাকে এই গাছ তবে পরিপূর্ণ সূর্যলোক বেশি ভালো এই গাছের জন্য। 

ছাঁটাই

অপরাজিতা গাছের পুরাতন শেকড় ছাঁটাই করে দিতে হবে। তাহলে নতুন শেকড় এবং শাখাপ্রশাখা জন্মাবে। এই গাছে শাখা যত বেশি ফুল তত বেশি ফোটে। অপরাজিতা গাছের বিশেষ কাটিং পদ্ধতি রয়েছে যা এই গাছের শেকড় বৃদ্ধি করবে এবং তার সাথে শেকড়ের গোঁড়ায় ফুল ফুটবে। 

কীটনাশক 

অপরাজিতা গাছের মোটামুটি একটি শক্তিশালী গাছ। লতানো এই গাছে মাঝেমধ্যে ছত্রাক এবং পাতায় পোকা মাকড়ের আক্রমণ করতে পারে। এতে গাছের খুব বেশি ক্ষতি করতে পারে না। তবে  এ-সব অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নিমপাতার স্প্রে করে দিতে হবে। 

সার প্রয়োগ

অপরাজিতা ফুল গাছে খুব বেশি সার দিতে হয় না। শুধু জৈবসার দিলে এই গাছ অনায়াসে ভালো থাকে দিনের পর দিন। তবে ফুল ফোঁটার সময় এই গাছে রাসায়নিক যুক্ত সার দিলে বেশি ফুল পাওয়া যায়। 

আরও পড়তে পারেন: মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা ও যত্ন

অপরাজিতা ফুলের চা কীভাবে বানাবেন

স্বাস্থ্য সম্মত অর্গানিক চা হচ্ছে অপরাজিতা ফুলের চা। এটির রয়েছে বহু উপকারিতা। ভেষজ এই ঔষধি গাছের ফুলে রয়েছে রোগ নিরাময়মূলক বৈশিষ্ট্য। 

অপরাজিতা ফুলের চা কীভাবে বানাই

প্রথমে প্রয়োজন অনুযায়ী একটি পাত্রে পানি নিন। তবে প্রতি কাফ চায়ের জন্য অপরাজিতা ফুল লাগবে ৪-৫ টি। তারপর পানি গরম হয়ে আসলে এক টুকরো দারচিনি, ২-৩ পিস এলাচি, এক অথবা দুই টুকরো আদার সাথে প্রতি কাফ অনুযায়ী ৪-৫ টি অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি দিয়ে প্রায় ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর চুলা বন্ধ করে ৫ মিনিট পর্যন্ত ঢেকে রাখুন।অতঃপর  চা পান করতে পারবেন। এই চা পান করার আগে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন (ঐচ্ছিক)। তবে এই চায়ের সাথে এক-দুই ফোঁটা লেবু মেশাতে পারেন তাহলে নীল থেকে এই চায়ের রং হয়ে যাবে বেগুনি। 

অপরাজিতা ফুল কখন ফোটে 

বাংলাদেশের ঋতু অনুযায়ী বিভিন্ন ফুল বিভিন্ন সময় ফোটে। তার মধ্যে বেশির ভাগ ফুল বর্ষা ঋতুতে ফোটে। অপরাজিতা ফুলও তার ব্যতিক্রম নয়। দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া অনুযায়ী অপরাজিতা ফুল বাংলাদেশে জুন থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বেশি ফোটে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে বছরের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই এই ফুল পাওয়া যায়। 

অপরাজিতা ফুল কখন ফোটে 

অপরাজিতা গাছের বৈশিষ্ট্য 

  • অপরাজিতা ফুল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। 
  • বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বাড়ির আঙ্গিনায় এটি রোপণ করা হয়ে থাকে।
  • অপরাজিতা একটি লতানো গাছ।
  • এই গাছের রয়েছে বহু ঔষধি গুণাগুন।
  • এটি এক পাপড়ির ফুল।
  • অপরাজিতা গাছ দ্রুত বেড়ে উঠে 
  • অপরাজিতা গাছ কম যত্নে বহুদিন বেঁচে থাকে।

শেষকথা

বহুগুণে গুণান্বিত অপরাজিতা ফুল গাছ। ঘরের আঙ্গিনায় অথবা ছাদ বাগানে অন্য গাছের সাথে এই গাছটি রাখতে পারেন। এর রয়েছে বহু ভেষজ উপকার। যা ঘরে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘরে থাকা মানুষের ঔষধি কাজ করবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *