তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর ৭টি উপায়
মশা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। ক্ষতিকর এই কীটপতঙ্গ কে ঘর থেকে তাড়ানো জরুরি। মশা থেকে অনেক রোগবালাই ছড়ায়।

মশা একটি ক্ষতিকর ক্ষুদ্র কীট। বাড়ির বিভিন্ন স্থানে মশার উপদ্রব দেখা যায়। পৃথিবীর সব জায়গায় মশা বিচরণ করে। মশা তাড়ানো উপায় অনেক আছে। এই মশা ভয়ানক রোগব্যাধি ছড়ায়। মশা থেকে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস, ম্যালেরিয়াসহ আরো বিভিন্ন রোগ মারাত্মক রোগব্যাধি ছড়ায়।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে মশা তাড়ানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানো যায়। তেজপাতা, রসুন এবং কর্পূর দিয়েও বাড়ি থেকে মশা তাড়ানো যায়। তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর ঘরোয়া টিপস শেয়ার করলাম
তেজপাত দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
মশা একটি দুই পাখা ওয়ালা কীটপতঙ্গ। ছোট এই কীটপতঙ্গ আমাদের জন্য অনেক বিপজ্জনক। তাই, মশা কে যেকোনো ভাবে ঘর থেকে দূর করতে হবে।
তেজপাতা এবং দিয়াশলাই
প্রথমে একটি বাটিতে বেশ কয়েকটি তেজপাতা নিয়ে নেন। তারপর দিয়াশলাই দিয়ে তেজপাতগুলো আস্তে আস্তে জ্বালিয়ে দিন। তেজপাতা যতক্ষণ জ্বলবে ততক্ষণ ঘরের আশেপাশে মশা থাকবে না। এটি খুবই প্রাকৃতিক পদ্ধতি হওয়ায় কোনো সাইড ইফেক্ট নাই।

তেজপাতা এবং কর্পূর
সবার আগে একটি বাটিতে কয়েকটি শুকনো তেজপাতা নিন। তারপর কর্পূর গুলো গুঁড়ো করে তেজপাতা উপর ছিটিয়ে দিন। সর্বশেষ কর্পূর মিশ্রিত তেজপাতাগুলো পুড়িয়ে ফেলুন। তাহলে তেজপাতা এবং কর্পুরের গন্ধে মশা চলে যাবে। তেজপাতা এবং কর্পুরের গন্ধ মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।

কর্পূর, মোমবাতি এবং তেজপাতা
প্রথমে ২/৩ টি কর্পূর গুঁড়ো করে নিবেন। কর্পূরের সাথে কয়েকটি তেজপাতা নিতে হবে। তেজপাতা গুলো আগুন ধরিয়ে দিবেন। তেজপাতার গায়ে হালকা ঘি মেখে নিতে পারেন। তাহলে তেজপাতা ভালোভাবে জ্বলবে। তেজপাতার আগুনের উপর কর্পুরের গুঁড়ো ছেড়ে দিন। তাহলে তেজপাতা এবং কর্পুরের গন্ধে মশা এবং মাছি ঘর থেকে পালাবে।
আরও পড়তে পারেন:
চায়না তেলাপোকা দূর করার ঘরোয়া ৭টি উপায়
মাছি তাড়ানোর ৭টি ঘরোয়া উপায়
রান্নাঘর থেকে তেলাপোকা তাড়ানোর উপায়
তেজপাতা, কর্পূর এবং নিমের তেল
কয়েকটি কর্পূর গুঁড়ো করে নিমের তেলের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে পারেন। নিম এবং কর্পূর মিশ্রিত তেলগুলো একটি স্প্রে বোতলে নিন। পরে তা তেজপাতার গায়ে ছিটিয়ে দিন। তারপর তেজপাতাগুলো পুড়িয়ে ফেলুন। স্প্রে বোতল না থাকলে হাত দিয়ে মিশ্রিত তেল টি তেজপাতার গায়ে লাগিয়ে দিন।

তেজপাতা, রসুন, কর্পূর এবং সয়াবিন তেলের মিশ্রণ
প্রথমে রসুন, কর্পূর এবং সয়াবিন তেল দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করেন। অতঃপর পেস্ট করা মিশ্রন গুলো তেজপাতার গায়ে লাগিয়ে দিন। তারপর তেজপাতাগুলো পুড়িয়ে ফেলুন। কর্পূর, রসুন এবং তেজপাতার গন্ধে মশা এবং মাছি পালিয়ে যাবে।
তেজপাতা ও লবঙ্গ
একটি পাত্রে লবঙ্গ এবং তেজপাতা একসাথে রেখে দিন। তাহলে ঘর থেকে মশা এবং মাছি পালাবে। এটি মশা তাড়ানোর অনেক সহজ একটি পদ্ধতি।

তেজপাতা এবং পানি
একটি পাত্রে সামান্য পানি নিয়ে নিন। পানির মধ্যে কয়েকটি তেজপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। ফুটানো পানি একটি স্প্রে বোতলে ঢুকিয়ে ঘরের বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করে নিন। তাহলে খুব সহজেই মশা ঘর থেকে বের হয়ে যাবে৷
মশা থেকে কি কি রোগ ছড়ায়
মশা থেকে অনেক মারাত্মক রোগব্যাধি ছড়ায়। যা মানুষের প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে। তাই মশা কে কখনো সাধারণ ভাবে নেয়া উচিত নয়। বাংলাদেশ সরকার মশা দমনের জন্য প্রতি বছর অনেক টাকা ব্যয় করে। মশা নিম্নোক্ত রোগগুলি ছড়ায়:-
- ডেঙ্গু
- ম্যালেরিয়া
- চিকনগুনিয়া
- জিকা ভাইরাস
- ফাইলেরিয়া
গোয়াল ঘরের মশা তাড়ানোর উপায়
গরুর খামার বা গোয়াল ঘরে মশা অনেক বেশি থাকে। গেয়াল ঘরে ময়লা আবর্জনা থাকায় সেসব স্থানে মশার উপদ্রব বেশি থাকে। মশা তাড়ানো উপায় অনেক আছে। মশা থেকে অনেক রোগবালাই হয়ে থাকে। যেমন:- লাম্পি স্কিন ডিজিজ, এনসেফালাইটিস, ওয়েস্ট লাইন ভাইরাস এবং ব্লুটাং রোগ হয়ে থাকে।
এসব রোগ থেকে গবাদি পশুকে মশারি অথবা মশা তাড়ানোর বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। গোয়াল ঘর থেকে মশা তাড়ানোর ২ টি উপায় রয়েছে। প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং রাসায়নিক পদ্ধতি।
প্রাকৃতিক পদ্ধতি
কর্পূর:- কর্পুরের গন্ধ মানুষের জন্য উপকারী হলেও মশার সহ্য করতে পারে না। গরুর খামারে বিভিন্ন স্থানকে কয়েকটি কর্পূর দিয়ে রাখেন। কর্পুরের গন্ধে মশা পালাবে।
তেজপাতা:- কয়েকটি তেজপাতা গোয়াল ঘরের ভিতরে পুড়িয়ে দিন। অথবা একটি পাতিলে পানি নিয়ে তেজপাতা ফুটিয়ে নিন। তারপর পানি একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে গোয়াল ঘরে বিভিন্ন স্থানে ছিটিয়ে দিন।
রসুনর:- সুনের গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না। কয়েকটি মশা ব্লান্ডার করে গোয়াল ঘরে স্প্রে করে দিন।
লবঙ্গ:- একটি লেবুর মাঝ বরাবর কেটে তার গায়ে কয়েকটি লবঙ্গ বসিয়ে গোয়াল ঘরের এক কর্নারে রেখে দিন। তাহলে মশা চলে যাবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন:- মশা মাছি দূর করার জন্য গোয়াল ঘর অবশ্যই পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ময়লা আবর্জনা যুক্ত জায়গা মশা মাছির বেশি পছন্দ। তাই গোয়াল ঘর সব সময় পরিষ্কার করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি
কয়েল:- মশা দূর করার জন্য আমাদের দেশে সব থেকে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে মশার কয়েল। এটি রাসায়নিক পদ্ধতির মধ্যে অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী।
স্প্রে:- মশা মারার অনেকগুলো স্প্রে রয়েছে। এগুলো বাজারে/মার্কেটে পাওয়া যায়। তবে স্প্রে মারার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন গরুর ক্ষতি না হয়।
ব্যাট:- বর্তমানে মশা মারার জন্য অনেক কোম্পানির ব্যাট তৈরি করছে। এগুলো দিয়ে সব মশা মারা না গেলেও অনেক মশা মারা যায়।
পরামর্শ
মশা এবং মাছি দূর করার জন্য ঘর বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশু বা বয়স্কদের জন্য মশা অনেক বেশি ক্ষতিকর। বাড়ি থেকে মশা দূর করার জন্য দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। রাসায়নিক এবং ঘরোয়া পদ্ধতি। রাসায়নিক পদ্ধতির মধ্যে অনেক সাইড ইফেক্ট থাকলেও প্রাকৃতিক উপায়ে মশা দূর করতে পারলে সেটা খুবই উপকারী।