মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা ও যত্ন

মানি প্লান্ট গাছ ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। মানি প্লান্ট গাছ বাতাস পরিশোধন করে এবং এই গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে।

মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা ও যত্ন

মানি প্লান্ট ঘরের বাতাস থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে বাতাসকে বিশুদ্ধ করে এবং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আজকের ব্লগে মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা ও যত্ন সম্পর্কে আলোচনা করা করবো।

ঘর সাজাতে যে সব ইনডোর প্লান্ট ব্যবহার হয়ে থাকে তার মধ্যে মানি প্লান্ট অন্যতম। মানি প্লান্ট গাছকে Pothos (পোথাস) বলা হয়। ইন্টেরিয়র ডিজাইনে এই গাছের বেশ ব্যবহার হয়ে থাকে।

মানি প্লান্ট একটি জনপ্রিয় ইনডোর প্লান্ট। মানি প্লান্ট ঘরকে সতেজ রাখে এবং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এই গাছ ঘরে থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানি প্লান্ট গাছের পরিচর্যা করা খুবই সহজ এবং মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতাও অনেক বেশি। 

মানি প্লান্ট ঘরের বায়ু পরিশোধন করে এবং ঘরের ভিতরে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক শোষণ করে ঘরকে সতেজ রাখে। লতানো এই গাছ বারান্দায় অথবা বেডরুমে একটি টবে ঝুলিয়ে রাখলে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। 

মানি প্লান্ট গাছের পরিচর্যা খুব বেশি নিতে হয় না। আলো-বাতাস চলাচল করে করে এসব জায়গায় রাখলে এই গাছ খুব দ্রুত বেড়ে উঠে। তবে পরোক্ষ সূর্যের আলোতে রাখতে হবে। নিয়মিত পানি দেওয়া, পাতা ছাঁটাই করা এবং মাটির আর্দ্রতা, তাপমাত্রার বিবেচনা করে পরিচর্যা করতে হবে। 

মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা

মানি প্লান্ট গাছ বাতাসে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ শোষণ করে বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। মানি প্লান্ট ঘরের পরিবেশ কে শান্ত রাখে এবং পরিবেশ কে নিরাময়মূলক করে তোলে।

বাতাস কে বিশুদ্ধ করে 

মানি প্লান্ট গাছ বাতাসে থাকা বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে বাতাস কে করে বিশুদ্ধ করে। বাতাসে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস শোষণ করে ঘরের বাতাস পরিষ্কার করে। মানি প্লান্ট গাছ অক্সিজেন উৎপাদন করে যা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য উপকারী। 

মানসিক চাপ কমায়

মানি প্লান্ট গাছের সৌন্দর্য ঘরের পরিবেশ কে শিথিল করে, যা আপনার মন কে প্রশান্তি দিবে। লতা বিশিষ্ট এই গাছ ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

অনেকদিন বাঁচতে সক্ষম 

মানি প্লান্ট গাছ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে সক্ষম। বিভিন্ন পরিবেশে এই গাছ খুব সহজে বেঁচে থাকে এবং ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। এই গাছকে বারবার স্থানান্তর করতে হয় না। 

 ঘর সাজাতে ব্যবহার

বেডরুম থেকে রান্নাঘর সব জায়গায় এই লতানো গাছ রাখতে পারবেন। ঘরের যে কোনো কর্নারে মানি প্লান্ট গাছ রাখতে পারেন। বুক শেলফ অথবা ক্যাবিনেটে রাখলে দেখতে ভালো লাগবে। মানি প্লান্ট যেহেতু লতানো গাছ ঘরের যেকোনো কর্নারে একটি টবে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। 

বারান্দায় অথবা জানালার পাশে একটি মানি প্লান্ট গাছ রাখতে পারেন। এই গাছ বারান্দার শোভা বৃদ্ধি করবে। ডাইনিংয়ে রুমে এই গাছ রাখতে পারেন।  ডাইনিংয়ে রুমের টেবিল, রেফ্রিজারেটর টি টেবিলের উপর রাখতে পারেন মানি প্লান্ট গাছ। ইনডোর প্লান্ট দিয়ে ঘর সাজাতে টব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দর একটি টবে মানি প্লান্ট সাজিয়ে রাখলে ঘরের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। 

মানি প্লান্ট গাছ ঘরের পরিবেশ কে শান্ত রাখে এবং পরিবেশ কে নিরাময়মূলক করে তোলে, যা শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মানি প্লান্ট গাছ মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং ঘরের পরিবেশ কে স্বাস্থ্যকর করে তুলে।

আরও পড়তে পারেন:

কম পরিচর্যায় ভালো থাকে যেসব ইনডোর প্লান্ট

বাড়ির অবহেলিত খালি জায়গাগুলো সাজিয়ে তুলবেন যেভাবে

মানি প্লান্ট গাছের পরিচর্যা

পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাসের ব্যবস্থা রাখুন

মানি প্লান্ট গাছটি অল্প আলোতে বেড়ে উঠতে পারে, তবে সরাসরি সূর্যের আলোতে এই গাছ বেড়ে উঠতে পারে না। কারণ, সূর্যের আলোয় গাছের পাতা পুড়ে যেতে পারে। তাই মানি প্লান্টের জন্য সরাসরি আলোর থেকে পরোক্ষ আলো বেশি কার্যকরী। অল্প আলোতে মানি প্লান্ট বেঁচে থাকতে পারে। তবে, আলো-বাতাসের মধ্যে হলে গাছটি খুব দ্রুত বেড়ে উঠে। 

নিয়মিত পানি দিতে হবে

মানি প্লান্ট গাছে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না। পানি দেওয়ার আগে অবশ্যই মাটির আর্দ্রতা দেখে পানি দিতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত পানি দিলে গাছের শিকড় পচন ধরতে পারে। 

মানি প্লান্ট গাছ বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। মাটি শুষ্ক হয়ে গেলে তখন পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে মাটি হাত দিয়ে চেক করে পানি দিতে হবে। 

শীতকালে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে তাই শীতের সময় বেশি পানি দেওয়া যাবে না। তখন গাছ কম পানি শোষণ করে। 

পাতা এবং শেকড় ছাঁটাই করতে হবে

মানি প্লান্ট গাছ অল্প সময়ে বেড়ে উঠে। এজন্য সময়সীমা অনুযায়ী গাছের পাতা ছাঁটাই করতে হবে। যাতে গাছের আকৃতি সুন্দর হয়।

গাছে থাকা অতিরিক্ত শাখা ছাঁটাই করে ফেলুন। অতিরিক্ত শাখা ছাঁটাই করে নতুন শাখা বের হওয়ার সুযোগ করে দিন। পুরোনো এবং শুকিয়ে যাওয়া পাতা ছিড়ে ফেলুন। এতে, নতুন পাতা জন্মাবে। যা গাছের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে এবং গাছকে আন্ত পরিচর্যার সুযোগ করে দিতে হবে।

আরও পড়তে পারেন: মানিপ্লান্ট গাছ কোথায় রাখা উচিত? ঘর ও অফিসের সেরা ৬ স্থান

প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করুন

মানি প্লান্ট গাছে প্রতি মাসে একবার জৈব সার অথবা প্রয়োজনীয় অন্যান্য সার দিতে পারেন। এর ফলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তবে অতিরিক্ত সার দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত সার গাছের পরিপক্বতা নষ্ট করবে। এতে গাছের ক্ষতি হতে পারে। 

শীতকালে সার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। শীতকালে এমনিই বাড়ির আর্দ্রতা বেশি থাকে। তাই তখন সার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। 

মানি প্লান্ট গাছটি উর্বর মাটিতে ভালো থাকে। মাটি যেন ভালোভাবে পানি নিষ্কাশন করতে পারে, সেজন্য মাটির সাথে কিছু বালু বা পাথর মেশানো যেতে পারে।

পাতা এবং শেকড় পরিষ্কার রাখতে হবে

মাঝে মধ্যে মানি প্লান্ট গাছের পাতায় ধুলাবালি বসতে পারে। হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে পাতাগুলো মুছে দিতে হবে এবং গাছ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। অনেক কীটপতঙ্গ গাছের পাতায় বসতে পারে। মুছে দিলে সেগুলো চলে যাবে।

ইনডোর প্লান্টের জন্য ঘরোয়া অথবা প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। সাবান পানি অথবা ডিটারজেন্ট পানি দিয়ে স্প্রে করতে পারেন। সঠিক উপায়ে মানি প্লান্ট গাছের যত্ন নিলে এই গাছ অনেক দিন ভালো থাকে।

বড় পাত্রে রাখতে হবে

মানি প্লান্টের জন্য সঠিক পাত্র নির্বাচন করুন। এতে গাছের শিকড় উপযুক্ত জায়গায় থাকতে পারে। পাত্রের তলায় পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র করে দিবেন। তাহলে অতিরিক্ত পানি ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যাবে।

গাছটি এমন স্থানে রাখুন যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করে। তবে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে এমন জায়গায় রাখা যাবে না। সরাসরি সূর্যের আলো পড়লে গাছের পাতায় হলদেটে ভাব চলে আসবে।

মানি প্লান্ট গাছের বৈশিষ্ট্য

  •  এই গাছের পাতা গোলাকার হয়।   
  • মানি প্লান্ট গাছের পাতা সবুজ বর্ণের হয়। সবুজ বর্ণের পাতাগুলোতে সাদা এবং হলুদ রঙের চাপ থাকে। 
  • মানি প্লান্ট গাছের উচ্চতা ৫-৬ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
  • পরোক্ষ আলো এই গাছের জন্য বেশি উপকারী । 
  • বিভিন্ন তাপমাত্রায় ভালো থাকে এই গাছ। 

সাবধানতা

  • মানি প্লান্ট গাছ বিছানা থেকে ৫ ফুট দূরত্বে রাখুন। মানি প্লান্ট গাছ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হতে পারে। তাই বিছানা থেকে নিরাপদ দূরত্বে এই গাছ রাখা উচিত।
  • মানি প্লান্ট গাছের পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল থাকে। যা, পোষা প্রাণী এবং শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • মানি প্লান্টের বিষক্রিয়া কুকুর এবং বিড়ালের পেটে গেলে মৃত্যু হতে পারে। 
  • ঘরে মানি প্লান্ট গাছ বেশি রাখলে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।

শেষকথা 

মানি প্লান্ট গাছ ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, ঘরের বাতাস কে বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি ঘরকে রাখে সতেজ। মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা ও যত্নের টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনার গাছটি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারবে। বাস্তুমতে, মানি প্লান্ট গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে অমঙ্গল হয়। তাই এই গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে তা নিয়মিত ছাঁটাই করে ফেলুন।

FAQ

মানি প্ল্যান্ট কি বিষাক্ত?

মানি প্লান্ট গাছের পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল থাকে। যা পোষা প্রাণী এবং শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

মানি প্লান্ট গাছ কোন দিকে রাখা উচিত?

অনেকে মনে করে, মানি প্লান্ট গাছ ঘরের দক্ষিণ পূর্ব দিকে লাগাতে হয়। এই দিকে লাগালে ঘরে সুখ শান্তি বৃদ্ধি পায়। তবে এই কথার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নাই।

মানিপ্লান্টের পাতা কিভাবে পরিষ্কার করব?

মাঝে মধ্যে মানি প্লান্ট গাছের পাতায় ধুলাবালি বসতে পারে। হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে পাতাগুলো মুছে দিতে হবে এবং গাছ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। অনেক কীটপতঙ্গ গাছের পাতায় বসতে পারে। মুছে দিলে সেগুলো চলে যাবে।
ইনডোর প্লান্টের জন্য ঘরোয়া অথবা প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। সাবান পানি অথবা ডিটারজেন্ট পানি দিয়ে স্প্রে করতে পারেন।

মানিপ্লান্ট গাছের জন্য কোন পানি ভালো?

মানি প্লান্টের জন্য পরিষ্কার এবং বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা জরুরি

মানি প্ল্যান্টকে কেন মানি প্ল্যান্ট বলা হয়?

মানি প্লান্ট গাছের পাতাগুলো গোলাকার, চ্যাপ্টা এবং একটু মোটা হয়ে থাকে। যা, দেখতে অনেক টা মুদ্রার মতো । মূলত, এই জন্য এই গাছ কে মানি প্লান্ট বলা হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *