মাসিক বাজারের লিস্ট তৈরির সঠিক নিয়ম
সংসার চালাতে পরিকল্পিত মাসিক বাজারের লিস্ট খুবই জরুরি। এতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমে, সময় সাশ্রয় হয় এবং সব প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে মেলে।

সংসার চালাতে গেলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাজার ও খরচের সঠিক ব্যবস্থাপনা। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে বাজেট ভেঙে যায় অথবা প্রয়োজনীয় কোনো কিছু বাদ পড়ে যায়। তাই সংসারে খরচ বাঁচাতে এবং সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে মাসিক বাজারের লিস্ট খুব জরুরি। এই লিস্ট শুধু খরচ কমায় না, বরং সময়ও বাঁচায় এবং পরিবারকে সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। নিচে সংসারে প্রয়োজনীয় বাজারকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
মাসিক বাজারের লিস্ট
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য
প্রতিটি পরিবারের মূল খাবার নির্ভর করে চাল, আটা, ডাল, তেল, লবণ ও চিনি ইত্যাদির উপর। এগুলো ছাড়া দৈনন্দিন রান্না সম্ভব নয়। তাই মাসিক বাজার লিস্ট করার সময় প্রথমেই এগুলোর হিসাব রাখতে হবে।
চাল:- চাল আমাদের প্রধান খাদ্য, তাই মাসিক বাজারে এটি প্রথমেই রাখতে হয়। পরিবারের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী চালের পরিমাণ নির্ধারণ জরুরি। সাধারণত চার সদস্যের পরিবারের জন্য মাসে ৩০–৩৫ কেজি যথেষ্ট। বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী সঠিক চাল বেছে নিতে হবে। চাল সংরক্ষণের সময় ঠান্ডা ও শুকনো জায়গা বেছে নেওয়া উচিত, না হলে পোকা ধরার ঝুঁকি থাকে।
আটা:- রুটি বা পরোটা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আটা প্রয়োজনীয় পরিমাণে রাখা উচিত। সকালে নিয়মিত রুটি বা পরোটা চালের উপর চাপ কমাবে। পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী মাসে ৫–১০ কেজি আটা যথেষ্ট হয়। এছাড়া ময়দা ও সুজি কিনে রাখা যায়, যা বিভিন্ন খাবার তৈরিতে কাজে লাগে।
ডাল:- ডালকে “গরিবের মাংস” বলা হয়, কারণ এটি প্রোটিনের ভালো উৎস। মসুর, মুগ ডাল পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ডাল মজুত করে রাখুন। ডাল আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখতে হবে এবং শুকনো কন্টেইনারে রাখা উচিত।
তেল:- রান্নার স্বাদ ও গুণ বজায় রাখতে তেল অপরিহার্য। ভোজ্য তেল রান্নায় অপরিহার্য, তাই অন্তত এক মাসের প্রয়োজনমতো কিনে রাখা উচিত। চেষ্টা করুন যতটুকু কম দিয়ে রান্নার কাজ শেষ করা যায়।
লবণ ও চিনি:- লবণ রান্নার অন্যতম অপরিহার্য উপাদান, যা স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরের সোডিয়াম চাহিদা পূরণ করে। চা, কফি, মিষ্টান্ন বা ডেজার্ট তৈরিতে চিনি অপরিহার্য। তবে ব্যবহারের সময় স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে হয়। এগুলো ছোট খরচের হলেও প্রতিদিন দরকার হয়, তাই আগেভাগে সংগ্রহ করলে বাজারে ছুটোছুটি করতে হয় না।

শাকসবজি ও ফলমূল
শরীরকে সুস্থ রাখতে শাকসবজি ও ফলের কোনো বিকল্প নেই। এগুলো ভিটামিন, খনিজ ও আঁশের চাহিদা পূরণ করে।
শাকসবজি:- পালং, লালশাক, লাউ, করলা, বেগুন, আলু, টমেটো, পেঁয়াজ ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়ার জন্য লিস্টে রাখুন। এগুলো পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাবে।
ফলমূল:– কলা, আপেল, কমলা, পেয়ারা, পেঁপে এবং মৌসুমি ফল যেমন আম, কাঁঠাল বা লিচু।
তবে শাকসবজি ও ফলমূল বেশি দিন তাজা রাখা যায় না, তাই সাপ্তাহিক বা প্রতি ৩-৪ দিনে একবার কেনা উত্তম।

মাছ, মাংস ও ডিম
প্রোটিন শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। তাই মাসিক বাজারে এগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে।
মাছ: ইলিশ, রুই, কাতলা, পাঙ্গাস বা তেলাপিয়া যা সহজলভ্য এবং পরিবারের পছন্দের। বাজার কাছে হলে সপ্তাহে একবার মাছ সংগ্রহ করুন
মাংস:- গরু, খাসি বা মুরগির মাংস প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী রাখতে পারেন। এটি পরিবারের অন্যতম ব্যয়বহুল খরচ। তাই প্রয়োজনের বাহিরে ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন।
ডিম:- সবচেয়ে সাশ্রয়ী প্রোটিন হলো ডিম। এটি সকালের নাশতা থেকে রাতের খাবার পর্যন্ত নানা রকমভাবে খাওয়া যায়। এসব বাজার করলে অবশ্যই ফ্রিজ বা ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

মসলা ও শুকনো পণ্য
বাংলাদেশি রান্নার স্বাদ অনেকাংশেই নির্ভর করে মসলা ও শুকনো খাবারের উপর।
মসলা: মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, জিরা, গরম মসলা, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি ইত্যাদি অবশ্যই বাজারের লিস্টে রাখতে হবে। এগুলো ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।
শুকনো খাবার:- মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট, নুডলস এবং সেমাই এসব হালকা নাশতার জন্য খুব দরকারি।
আদা-রসুন:- রান্নায় প্রতিদিন ব্যবহার হয়, তাই প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে কিনে রাখা জরুরি।
আরও পড়তে পারেন: ছোট পরিবারের মাসিক বাজারের তালিকা | খরচ বাঁচানোর উপায়
দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
দুধ ও দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে এবং শিশুদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
দুধ:- তরল দুধ বা গুঁড়ো দুধ যেটা সুবিধাজনক মনে হয়, সেটি বাজারে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে তরল দুধ সবচেয়ে বেশি ভালো।
দই:- খাবারের পর দই হজমে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর। এটি খুব জুরুরি না হলেও প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।

গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
খাদ্যদ্রব্যের বাইরে প্রতিটি সংসারে কিছু অপরিহার্য সামগ্রী থাকে।
সাবান ও ডিটারজেন্ট:- কাপড় ও শরীর পরিষ্কার রাখতে এগুলো অপরিহার্য। সংসারের অপরিহার্য জিনিসগুলোর মধ্যে এগুলো একটি।
টিস্যু ও ন্যাপকিন:- ময়লা পরিষ্কার এবং খাবার শেষে টিস্যু ব্যবহার করা হয় এবং অনন্য ব্যবহারের জন্য দরকার হয়। তাই মাসিক বাজারের লিস্টে এটি রাখতে পারেন।
কয়েল বা মশা তাড়ানোর জিনিস: মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাসিক বাজারে এগুলো রাখা আবশ্যক। অথবা মশা মারার ব্যাট নিয়ে রাখতে পারেন।

পানীয় ও অন্যান্য
চা, কফি, জুস বা লাচ্ছি অনেক পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এছাড়া ফিল্টারকৃত বা মিনারেল ওয়াটার রাখা অনেক সময় প্রয়োজন হয়। পরিবারে অতিথি এলে এগুলো তাৎক্ষণিক কাজে দেয়।
উপসংহার
মাসিক বাজারের লিস্ট তৈরি করলে সংসার পরিচালনা সহজ হয়, খরচ কমে এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা এড়ানো যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে শাকসবজি, মাছ-মাংস, মসলা, শুকনো খাবার, দুধ, গৃহস্থালি সামগ্রী সবকিছু শ্রেণিবিন্যাস করে লিস্ট বানালে বাজেটও নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সময়ও বাঁচবে।