বাথরুমের টাইলস পরিষ্কার করার সহজ ১৩টি উপায়

বাথরুমের টাইলস সবসময় ঝকঝকে রাখতে নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরি। প্রাকৃতিক উপাদান যেমন লেবু, লবণ, ভিনেগার বা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করে সহজেই ময়লা ও ফাঙ্গাস দূর করা যায়।

বাথরুমের টাইলস পরিষ্কার করার সহজ উপায়

বাড়ির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জায়গাগুলোর মধ্যে বাথরুম অন্যতম। প্রতিদিন পানি, সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্টসহ নানা জিনিস ব্যবহারের কারণে এখানে সহজেই দাগ ও ময়লা জমে যায়। বিশেষ করে টাইলসের ফাঁক বা গ্রাউটের অংশগুলো দ্রুত কালো হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ময়লা জমে দুর্গন্ধ, জীবাণু ও ছত্রাক জন্ম নিতে শুরু করে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তাই বাথরুমের টাইলস নিয়মিত পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই মনে করেন টাইলস পরিষ্কার করা কঠিন কাজ, কিন্তু আসলে কয়েকটি ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করলেই টাইলস সবসময় ঝকঝকে রাখা সম্ভব।

বাথরুম টাইলস পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয় উপকরণ

গরম পানি ও সাবান

প্রতিদিনের সাধারণ ময়লা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সাবান ও গরম পানি। এক বালতি গরম পানিতে সামান্য ডিটারজেন্ট বা লিকুইড সাবান মিশিয়ে নিন। এর পর ব্রাশ বা স্পঞ্জ দিয়ে টাইলস ভালোভাবে ঘষুন। এর পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন বা অন্তত একদিন পর পর করলে দাগ জমতে পারবে না।

গরম পানি ও সাবান

ভিনেগার ব্যবহার

ভিনেগার টাইলসে জমে থাকা পানির দাগ, সাবানের আস্তরণ ও হালকা ফাঙ্গাস দূর করতে কার্যকর। সমপরিমাণ ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। টাইলস ও ফাঁকের জায়গায় ভালোভাবে স্প্রে করে ১০–১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ব্রাশ দিয়ে ঘষুন। পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে শুধু পরিষ্কারই হবে না, দুর্গন্ধও কমে যাবে।

ভিনেগার ব্যবহার

বেকিং সোডা ও লেবুর মিশ্রণ

শক্ত দাগ ও দুর্গন্ধের জন্য এই পদ্ধতি অসাধারণ। টাইলসে বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন তার উপর লেবুর রস ঢেলে দিন। এতে ফেনা উঠবে। কয়েক মিনিট পর ব্রাশ দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে টাইলস উজ্জ্বল ও ঝকঝকে থাকবে।

বেকিং সোডা ও লেবুর মিশ্রণ

টুথপেস্ট দিয়ে ছোট দাগ পরিষ্কার

টাইলসের ফাঁকের ছোট ছোট কালো দাগ দূর করতে টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে দাগ আছে সেখানে টুথপেস্ট লাগান। পুরোনো টুথব্রাশ দিয়ে ঘষুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুব সহজে ছোটোখাটো দাগ দূর করার উপায় এটি।

ব্লিচ ব্যবহার

যদি টাইলস অনেক ময়লা বা জীবাণুযুক্ত হয়, তখন ব্লিচ ব্যবহার করা যায়। তবে এটি সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। এক লিটার পানিতে আধা কাপ ব্লিচ মিশিয়ে নিন। ব্রাশ দিয়ে টাইলসে লাগান। ৫ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। খুব ঘন ঘন ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে টাইলস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ব্লিচ ব্যবহার

স্টিম (বাষ্প) দিয়ে টাইলস পরিষ্কার

স্টিম বা বাষ্প টাইলস পরিষ্কারের জন্য একটি আধুনিক ও স্বাস্থ্যকর উপায়। গরম বাষ্প টাইলসের গভীরে জমে থাকা ময়লা ও ফাঙ্গাস গলিয়ে দেয় এবং জীবাণুমুক্ত রাখে। যদি স্টিম ক্লিনার ব্যবহার করেন, তবে এটি অতিরিক্ত রাসায়নিক ছাড়াই টাইলসকে ঝকঝকে ও নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।

টাইলস ব্রাশ বা পুরোনো টুথব্রাশ ব্যবহার

টাইলসের ফাঁক বা গ্রাউটে জমে থাকা ময়লা সাধারণ কাপড় দিয়ে ওঠানো যায় না। এজন্য টাইলস ব্রাশ বা পুরোনো টুথব্রাশ ব্যবহার করা উত্তম। এটি কোণ ও ফাঁকের শক্ত ময়লাগুলো সহজেই দূর করে এবং টাইলসকে আরও পরিষ্কার রাখে। নিয়মিত এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে দাগ জমতে পারবে না।

টাইলস ব্রাশ বা পুরোনো টুথব্রাশ ব্যবহার

স্প্রে দিয়ে ফাঙ্গাস দূর করা

যদি টাইলসে ফাঙ্গাস বা কালচে দাগ জমে যায়, তবে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কার্যকর সমাধান হতে পারে। এটি সরাসরি স্প্রে করে ১০–১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর ব্রাশ দিয়ে ঘষে ফেলুন। এতে শুধু দাগই দূর হবে না, টাইলস জীবাণুমুক্তও হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে টাইলস অনেকদিন নতুনের মতো থাকবে।

স্প্রে দিয়ে ফাঙ্গাস দূর করা

লবণ ও লেবুর মিশ্রণ

প্রাকৃতিক উপায়ে টাইলস পরিষ্কারের জন্য লবণ ও লেবুর রস একটি কার্যকরী মিশ্রণ। লেবুর টক রস দাগ গলিয়ে দেয় এবং লবণের দানা স্ক্রাবারের মতো কাজ করে ময়লা তুলতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে সাবানের আস্তরণ বা হালকা ফাঙ্গাস দূর করতে দারুণ কাজ করে। চাইলে মাসে একবার ব্যবহার করতে পারেন।

রেডিমেড টাইলস ক্লিনার ব্যবহার

বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টাইলস ক্লিনার সহজলভ্য এবং দ্রুত কাজ করে। সময় বাঁচাতে বা কঠিন দাগ পরিষ্কার করতে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সব সময় প্রস্তুতকারকের নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। বেশি রাসায়নিকযুক্ত ক্লিনার ব্যবহার করলে টাইলসের উজ্জ্বলতা কমে যেতে পারে, তাই ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।

রেডিমেড টাইলস ক্লিনার ব্যবহার

নিয়মিত মপিং ও শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা

টাইলস সবসময় পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত যত্ন নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। প্রতিদিন ব্যবহার শেষে ভেজা মপ দিয়ে মুছে ফেলা এবং শুকনো কাপড় দিয়ে ঘষে নিলে জমাট দাগ তৈরি হবে না। এতে টাইলস দীর্ঘদিন ঝকঝকে ও স্বাস্থ্যসম্মত থাকবে। অভ্যাস গড়ে তুললে বড় দাগ পরিষ্কারের ঝামেলাও কমবে।

আরও পড়তে পারেন: বাথরুম পরিষ্কার রাখবেন যেভাবে

টাইলসের ফাঁক (গ্রাউট) পরিষ্কারের উপায়

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাথরুম নোংরা দেখায় গ্রাউট বা ফাঁকের দাগের জন্য। পুরোনো টুথব্রাশে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মিশ্রণ লাগিয়ে ফাঁকগুলো ঘষুন। চাইলে ব্লিচও ব্যবহার করতে পারেন, তবে গ্লাভস অবশ্যই পরবেন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার গ্রাউট পরিষ্কার করলে কালো দাগ আর জমবে না।

টাইলসের ফাঁক (গ্রাউট) পরিষ্কারের উপায়

বাজারের কিছু কার্যকর ক্লিনার

ঘরোয়া উপায়ের পাশাপাশি বাজারে কিছু ভালো ক্লিনার পাওয়া যায়, যেমন হারপিক, ক্লিনার, লিজল, ডোমেক্স, ফ্লোর ক্লিনার পাউডার। এগুলো সরাসরি টাইলসে ব্যবহার করা যায়, তবে অবশ্যই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। তবে মাথায় রাখবেন ব্লিচ, ভিনেগার ও অ্যাসিড একসাথে ব্যবহার করবেন না। এতে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হতে পারে। টাইলস ঘষার সময় সবসময় গ্লাভস ব্যবহার করুন। পরিষ্কার করার পর ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। বাথরুম ভিজে থাকলে ফ্লোর স্লিপারি হতে পারে, তাই সাবধান থাকুন।

বাজারের কিছু কার্যকর ক্লিনার

টাইলস পরিষ্কার রাখার নিয়মিত অভ্যাস

  • প্রতিদিন ব্যবহার শেষে বাথরুমের পানি ঝরিয়ে দিন।
  • সপ্তাহে অন্তত একবার টাইলস ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন।
  • মাসে একবার ডিপ ক্লিনিং (ভিনেগার, বেকিং সোডা বা ব্লিচ দিয়ে) করুন।
  • বাথরুমে যথেষ্ট ভেন্টিলেশন রাখুন, যাতে আর্দ্রতা কমে।


কেন বাথরুমের টাইলস পরিষ্কার রাখা জরুরি

বাথরুম পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব অনেক। এর কয়েকটি প্রধান কারণ হলো—

  • জীবাণু প্রতিরোধ:- নোংরা টাইলসে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস জমে স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • দুর্গন্ধ মুক্তি:- পানির দাগ ও সাবানের আস্তরণ দুর্গন্ধ ছড়ায়।
  • সৌন্দর্য বৃদ্ধি:- টাইলস ঝকঝকে থাকলে বাথরুমও পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর দেখায়।
  • দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার:- নিয়মিত পরিষ্কার করলে টাইলসের স্থায়িত্ব বাড়ে।

উপসংহার

বাথরুমের টাইলস পরিষ্কার রাখা শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও জরুরি। নিয়মিত সাবান ও গরম পানি ব্যবহার করলে সাধারণ দাগ দূর হবে, আর শক্ত দাগ বা জীবাণুর জন্য ভিনেগার, বেকিং সোডা ও ব্লিচ ব্যবহার করতে পারেন। বাজারের ক্লিনারও কার্যকর, তবে সতর্ক থাকতে হবে। অল্প কিছু সময় দিলেই আপনার বাথরুমের টাইলস সবসময় ঝকঝকে, সতেজ ও স্বাস্থ্যকর থাকবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *