ছোট বাসা সাজানোর কার্যকরী টিপস

ছোট বাসা সাজানো অনেক কঠিন কাজ। তবে, সবকিছু সঠিকভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারলে এটি হতে পারে আপনার প্রশান্তির সঙ্গী।

ছোট বাসা সাজানোর কার্যকরী টিপস

আমাদের দেশের শহরগুলোতে এখন ছোট বাসা বা ফ্ল্যাটে থাকা খুবই সাধারণ বিষয়। চাকরি, পড়াশোনা কিংবা সংসার সব কিছুর জন্য মানুষকে ব্যস্ত নগরজীবনে থাকতে হয়, আর এখানে জায়গার অভাব প্রায় সবার জন্যই বাস্তবতা। তবে জায়গা ছোট মানেই অগোছালো বা অস্বস্তিকর হবে, তা নয়। বরং ছোট বাসাকেই যদি একটু গুছিয়ে, বুদ্ধি খাটিয়ে সাজানো যায়, তাহলে সেটাই হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে আরামদায়ক আর প্রশান্তির জায়গা।

অনেকে মনে করেন ছোট ঘর কীভাবে সাজাবো। কিন্তু আসলে ছোট বাসা সাজানোর আলাদা কিছু সুবিধা আছে। কম জায়গা হওয়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সময় কম লাগে, কম খরচে সাজানো যায় এবং একটু কৌশল জানলেই সেই ছোট্ট জায়গাটাই হয়ে উঠতে পারে খুব সুন্দর আর আকর্ষণীয়।

ছোট বাসা সাজানো উপায়

রঙের সঠিক ব্যবহার 

ঘর সাজানোর শুরু হয় রং দিয়ে। ছোট বাসায় হালকা রঙের দেয়াল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাদা, অফ-হোয়াইট, ক্রিম, হালকা নীল বা হালকা সবুজের মতো রং ঘরে আলো প্রতিফলিত করে, ফলে ঘর খোলামেলা মনে হয়। গাঢ় রং যেমন কালো, বাদামি বা গাঢ় লাল ছোট ঘরকে আরও ছোট ও ভারী করে ফেলে। তাই ছোট বাসার জন্য হালকা রং সেরা পছন্দ।

শুধু দেয়ালে নয়, পর্দা, ফার্নিচার বা বিছানার চাদরের রং ও হালকা হলে পুরো পরিবেশটাই উজ্জ্বল আর প্রশান্ত দেখাবে। চাইলে একটি দেয়াল আলাদা রং করে আকর্ষণীয় লুক আনতে পারেন, তবে সেটাও যেন খুব বেশি গাঢ় না হয়।

ফার্নিচারের ব্যবহার

ছোট বাসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ফার্নিচার। বেশি ফার্নিচার রাখলে জায়গা কমে যায়, আর কম রাখলে প্রয়োজন মেটে না। তাই এখানে চাই মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচার। যেমন, সোফা-বেড দিনে সোফা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন, রাতে সেটা হয়ে যাবে বিছানা। খাটের নিচে যদি ড্রয়ার বা বক্স থাকে, সেখানে কাপড়, চাদর কিংবা অন্য জিনিস সহজেই রাখা যায়।

আবার ভাঁজ করা টেবিল ও চেয়ার ব্যবহার করলে কাজ শেষে গুটিয়ে রাখা যায়, এতে জায়গা বেঁচে যায়। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, ফার্নিচারের আকার যেন ছোট বাসার সঙ্গে মানানসই হয়। বড় সাইজের আলমারি বা ডাইনিং টেবিল রাখলে ঘর আরও ছোট মনে হবে।

ফার্নিচারের ব্যবহার

স্মার্ট স্টোরেজ আইডিয়া 

ছোট বাসায় অনেক সময় জিনিস গুছিয়ে রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। কিন্তু একটু পরিকল্পনা করলে সমাধান পাওয়া যায় সহজেই। দেয়ালের ফাঁকা জায়গায় শেলফ লাগিয়ে বই, শো-পিস বা টব রাখা যায়। দরজার পেছনে ঝুলন্ত ব্যাগ বা অর্গানাইজার ব্যবহার করলে জামা-কাপড়, ছোটখাটো জিনিস সহজে গুছিয়ে রাখা যায়। বিছানার নিচেও বক্স বা ড্রয়ার রাখা যায়, যেটা অনেকটা অদৃশ্য স্টোরেজ তৈরি করে দেয়। রান্নাঘরের মতো জায়গায়ও ঝুলন্ত শেলফ বা র‍্যাক ব্যবহার করা খুব কাজে আসে। এতে মেঝে খালি থাকে, আবার জিনিসও গুছিয়ে রাখা যায়।

স্মার্ট স্টোরেজ আইডিয়া 

বেডরুম সাজানো

ছোট শোবার ঘরে হালকা রঙের দেয়াল, সঠিক সাইজের বিছানা ও সাদামাটা সাজসজ্জা ব্যবহার করা উচিত। বিছানার নিচে স্টোরেজ ড্রয়ার রাখলে জায়গা বাঁচে। পর্দা, বেডশিট ও কুশনের রঙ সমন্বয় করলে ঘর আরও আরামদায়ক ও শান্তিপূর্ণ মনে হবে।

বেডরুম সাজানো

আয়নার ব্যবহার

আয়না ছোট বাসা সাজানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপাদানগুলোর একটি। দেয়ালে বড় আকারের আয়না লাগালে আলো প্রতিফলিত হয়ে ঘরকে অনেক উজ্জ্বল দেখায়। পাশাপাশি প্রতিফলনের কারণে জায়গা দ্বিগুণ মনে হয়। লিভিং রুম বা ডাইনিং স্পেসে আয়না ব্যবহার করলে ঘর আরও খোলা ও প্রশস্ত মনে হয়। তবে আয়নাকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে প্রাকৃতিক আলো সহজে প্রতিফলিত হয়।

আয়নার ব্যবহার

আলো-বাতাসের সঠিক ব্যবহার

ছোট বাসা উজ্জ্বল হলে সেটি বড় মনে হয়। তাই প্রাকৃতিক আলো আসতে দিন। জানালায় হালকা রঙের পাতলা পর্দা ব্যবহার করলে বাইরে থেকে আলো ভেতরে আসতে পারবে। ভারী পর্দা আলো আটকে দেয়, তাই ছোট ঘরে সেটি এড়িয়ে চলাই ভালো। আয়না ব্যবহার করলেও ঘর উজ্জ্বল মনে হয়।

আরও পড়তে পারেন: ঘর সাজানোর টুকিটাকি জিনিসপত্রের তালিকা

পর্দা ও কার্পেট দিয়ে ঘর সাজানো

ছোট ঘরে হালকা রঙের পর্দা ব্যবহার করলে ঘর উজ্জ্বল ও সতেজ দেখায়। মেঝেতে সাইজ অনুযায়ী কার্পেট ব্যবহার করলে ঘর গুছানো এবং পরিপাটি মনে হয়। হালকা প্রিন্ট বা এক রঙা পর্দা ও কার্পেট ছোট ঘরের জন্য আদর্শ, কারণ ভারী নকশা জায়গাকে আরও ছোট দেখায়। পাশাপাশি মেঝের সঙ্গে কনট্রাস্ট করে পর্দা ও কার্পেট ব্যবহার করলে আলাদা সৌন্দর্য যোগ হয়।

পর্দা ও কার্পেট দিয়ে ঘর সাজানো

রান্নাঘর গুছিয়ে রাখা

ছোট রান্নাঘর গোছাতে ক্যাবিনেট, ওয়াল শেলফ ও হ্যাঙ্গিং র‌্যাক ব্যবহার করা ভালো। এতে কম জায়গায় অনেক কিছু রাখা যায়। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে রাখুন আর অপ্রয়োজনীয় জিনিস সংরক্ষণে রাখুন। স্মার্ট স্টোরেজের কারণে রান্নাঘর পরিপাটি থাকবে এবং কাজও সহজ হবে।

রান্নাঘর গুছিয়ে রাখা

ছোট ডাইনিং সাজানো

ডাইনিং স্পেস ছোট হলে ভাঁজ করা যায় এমন ফার্নিচার বা মাল্টিপারপাস টেবিল ব্যবহার করা যেতে পারে। দেয়ালের পাশে ছোট সাইজের টেবিল রাখলে জায়গা বাঁচে। টেবিলের উপরে হালকা ডেকোরেশন বা ছোট ফুলদানি রাখলে পরিবেশ সুন্দর লাগে। আলো ঠিকমতো থাকলে ছোট ডাইনিংও আকর্ষণীয় দেখাবে।

ছোট ডাইনিং সাজানো

ইনডোর প্ল্যান্ট

একটি ছোট টবের গাছও ঘরের পরিবেশ বদলে দিতে পারে। ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে যেমন মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা বা সাকুলেন্ট ছোট ঘরের জন্য দারুণ মানানসই। এগুলো কম জায়গায় রাখা যায়, আবার বাতাসও বিশুদ্ধ করে। তবে খুব বেশি গাছ রাখলে ঘর ভরাট মনে হবে। তাই সীমিত সংখ্যক ছোট টবের গাছই যথেষ্ট। চাইলে ঝুলন্ত টব ব্যবহার করতে পারেন, এতে মেঝেতে জায়গা দখল হবে না।

ইনডোর প্ল্যান্ট

দেয়াল কাজে লাগানো

ছোট ঘরে মেঝেতে বেশি জিনিস রাখা মানেই ভিড় লেগে থাকা। তাই দেয়ালকে কাজে লাগাতে হবে। দেয়ালে শেলফ লাগিয়ে বই, শো-পিস বা ছোট টব রাখা যায়। আবার ফ্রেম বা ওয়াল আর্ট ঝুলিয়ে দিলে ঘর সুন্দর দেখায়। আয়নাও দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারেন, এতে ঘর বড় মনে হবে। ছোট বাসায় দেয়ালের ব্যবহারই হলো আসল বুদ্ধি।

দেয়াল কাজে লাগানো

অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলা

ছোট বাসাকে সুন্দর রাখার সবচেয়ে বড় টিপস হলো অপ্রয়োজনীয় জিনিস না রাখা। যে-সব জিনিস ব্যবহার করেন না, সেগুলো সরিয়ে ফেলুন বা দান করে দিন। যত কম জিনিস থাকবে, ঘর তত খোলামেলা লাগবে। মিনিমাল সাজসজ্জা ছোট ঘরের জন্য সবচেয়ে ভালো। মানে যা দরকার শুধু তাই রাখুন, বাড়তি কিছু নয়। এতে ঘর দেখতে সুন্দর লাগবে আর পরিষ্কার করতেও ঝামেলা হবে না।

অন্যান্য সাজসজ্জা

ছোট বাসায় খুব বেশি সাজসজ্জা না করলেও চলে। বরং ছোট ছোট জিনিস দিয়েই ঘর আকর্ষণীয় করা যায়। সোফার কুশনের কাভার পরিবর্তন করলে ঘরের লুকই পাল্টে যায়। ছোট কার্পেট বা ফ্লোর ম্যাট রাখলে ঘর গোছানো দেখায়। চাইলে ফেয়ারি লাইট বা ছোট ল্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ঘরকে উজ্জ্বল ও সুন্দর করে তোলে।

 সাজসজ্জা

উপসংহার

ছোট বাসা মানেই অসুবিধা নয়। বরং একটু পরিকল্পনা করে সাজালে এই ছোট বাসাই হতে পারে আপনার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। হালকা রং, মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচার, সঠিক স্টোরেজ, প্রাকৃতিক আলো এবং সামান্য সাজসজ্জা এই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেই ছোট বাসা হয়ে উঠবে আরামদায়ক ও আকর্ষণীয়। মনে রাখবেন, সাজানো মানে শুধু সুন্দর দেখা নয়, বরং জায়গাকে ব্যবহারযোগ্য আর আরামদায়ক করে তোলাই আসল বিষয়। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে গুছিয়ে রাখুন, ছোট বাসাই হয়ে উঠবে আপনার স্বপ্নের বাড়ি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *