ভাড়া বাসা সাজানোর উপায় – সহজ ও কম খরচে সুন্দর ঘর সাজানোর টিপস

কম বাজেটেও ভাড়া বাসা সুন্দরভাবে সাজানো যায়। এখানে থাকছে স্টেপ-বাই-স্টেপ বাস্তব ঘর সাজানোর টিপস।

ভাড়া বাসা সাজানোর উপায় – সহজ ও কম খরচে সুন্দর ঘর সাজানোর টিপস

ভাড়া বাসায় থাকলে অনেকেই মনে করেন ঘর সাজালে হয়তো খরচ বেড়ে যাবে, ফার্নিচার পাল্টাতে হবে, দেয়ালে রং করতে হবে, মানে সব মিলিয়ে যেন অতিরিক্ত ঝামেলা। কিন্তু সত্যি বলতে, ভাড়া বাসা সাজানোর উপায় খুবই সহজ, যদি আপনি একটু পরিকল্পনা করে কিছু স্মার্ট পরিবর্তন করেন। ঘর বড় হোক বা ছোট সঠিক লাইটিং, মিনিমাল ফার্নিচার এবং কিছু ডেকোর আইডিয়া ব্যবহার করলেই ঘর হয়ে উঠতে পারে একদম আরামদায়ক, শান্ত, স্টাইলিশ এবং ব্যক্তিত্বপূর্ণ।

এসব পরিবর্তনের জন্য বেশি টাকা খরচ করতে হয় না। কিছু জিনিস সেকেন্ড-হ্যান্ড মার্কেট থেকে নেওয়া যায়, কিছু আবার আপনি নিজেই বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। আজকের ব্লগে আমরা দেখবো, কম খরচে ভাড়া বাসা সাজানোর উপায়, যাতে আপনার ঘর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার মতো সুন্দর হয়ে ওঠে।

ঘর সাজানোর আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন

ঘরের স্পেস বুঝে পরিকল্পনা করা

ভাড়া বাসায় সাধারণত ঘরের দেয়ালের রং হালকা বা সাদা হয়। এটি আসলে আপনার জন্য সুবিধা, কারণ সাদা রং ঘরকে বড় এবং উজ্জ্বল দেখায়। প্রথমে ঘরের স্পেস পর্যবেক্ষণ করুন। কোন কর্নার খালি, কোন জায়গায় ফার্নিচার ভীষণ ঠাসা, কোথায় ঢুকতেই জিনিসপত্র আটকে যায়। তারপর ঠিক করুন কোন জিনিসগুলো রাখা দরকার আর কোনগুলো বাদ দেওয়া উচিত। ঘরে আলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। দিনের আলো যাতে আসে, সেই দিকটি ওপেন রাখুন। এতে ঘর আরও ফ্রেশ দেখাবে।

বাজেট নির্ধারণ ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দেওয়া

ঘর সাজাতে প্রথম ধাপ হলো বাজেট ঠিক করা। ধরা যাক, আপনি ৩,০০০–৫,০০০ টাকা খরচ করতে চান। তাহলে প্রথমে দেখুন কোন জিনিসে সবচেয়ে বেশি আপগ্রেড করা প্রয়োজন। উদাহরণ- পর্দা, বেডশিট, লাইটিং বা শেলফ। পাশাপাশি ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন। ব্যবহার না করা ফার্নিচার, শোকেস ভর্তি পুরনো জিনিস এসবই ঘরকে ছোট ও ভারী দেখায়।

মাল্টি-ইউজ ফার্নিচার বাছাই করা

ভাড়া বাসায় বড় এবং ভারী ফার্নিচারের দরকার নেই। বরং এমন ফার্নিচার নিন যা একটি জিনিস বহু কাজে লাগে। যেমন- স্টোরেজসহ বেড যেখানে কম্বলের ব্যাগ বা কাপড় রাখা যায়, ভাঁজ করা ডাইনিং টেবিল যা প্রয়োজন না হলে ভাঁজ করে রাখা যায়, অথবা ওপেন শেলফ যা শুকেস ও বইয়ের র্যাক দুইভাবেই কাজ করে। মাল্টি-ইউজ ফার্নিচার ব্যবহার করলে ঘর শুধু গুছানো দেখায় না, বরং জায়গা বাঁচে এবং চলাচলও সহজ হয়।

বাজেট নির্ধারণ ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দেওয়া

সাশ্রয়ী ফার্নিচার সেটআপ

ছোট ফার্নিচার ব্যবহার করে জায়গা বাঁচানো

ঘর ছোট হলে বড় সাইজের সোফা, ভারী ওয়্যারড্রোব বা বড় টেবিল রাখা উচিত নয়। এগুলো ঘরকে ভরাট এবং চাপা ভাব দেয়। তার বদলে মিনিমাল সাইজের হালকা ফার্নিচার নির্বাচন করুন। যেমন- দুই সিটের ছোট সোফা, প্লাই বা লাইটউডের টেবিল, ওয়াল মাউন্টেড ওপেন শেলফ। ছোট ফার্নিচার শুধু জায়গা বাঁচায় না, বরং ঘরকে খোলা ও ফ্রেশ দেখায়। আপনি চাইলে মেঝেতে কুশন সিটিংও রাখতে পারেন। এটি স্টাইলিশ এবং সাশ্রয়ী দুইই।

ভাঁজ করা যায় বা সরানো যায় এমন ফার্নিচার ব্যবহার

ফোল্ডিং ফার্নিচার এখন খুবই জনপ্রিয়, বিশেষ করে ভাড়া বাসায়। কারণ এগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়, আর বাকি সময়ে জায়গা দখল করে না। উদাহরণ- ফোল্ডিং চেয়ারের সেট, ফোল্ডেবল স্টাডি টেবিল, বেড ট্রে টেবিল। আপনি যখন কাজ করবেন তখন খুলে নিন, আর কাজ শেষ হলে গুটিয়ে রেখে দিন। এতে ঘর সবসময় পরিপাটি, বড় এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য থাকে। বিশেষ করে স্টুডেন্ট বা নতুন দম্পতিদের জন্য এটি খুবই উপকারী।

আরও পড়তে পারেন: ছোট বাসা সাজানোর কার্যকরী টিপস

সেকেন্ড-হ্যান্ড বা কার্পেট মার্কেট থেকে ফার্নিচার কেনা

বাজেট কম হলে সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচার কিনে খুবই সুন্দর ঘর বানানো যায়। ঢাকায় কার্পেট মার্কেট, টঙ্গী, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা বা ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে খুব ভালো মানের ফার্নিচার অল্প দামে পাওয়া যায়। শুধু একটু স্যান্ডিং ও পলিশ করিয়ে নিলেই নতুনের মতো দেখাবে। এতে খরচ কমবে, কিন্তু লুক হবে অসাধারণ।

সাশ্রয়ী ফার্নিচার সেটআপ

ডেকোরেশন – কম খরচে ঘরকে সুন্দর দেখানো

দেয়ালে মিনিমাল আর্ট

দেয়াল খালি থাকলে ঘর ফ্ল্যাট এবং প্রাণহীন দেখায়। কিন্তু অনেক ছবি, পোস্টার, স্টিকার লাগালে ঘর অগোছালো দেখায়। তাই নিয়ম হলো কম কিন্তু বড় এবং স্পষ্ট ডেকর। যেমন এক বা দুইটি বড় সাইজের আর্ট প্রিন্ট, ফ্যাব্রিক ওয়াল হ্যাং, ম্যাক্রামে এবং আয়না। আয়না ঘরকে আরও বড় ও উজ্জ্বল দেখায়। চাইলে Pinterest বা Facebook গ্রুপ থেকে প্রিন্টেবল আর্ট ডাউনলোড করে খুব অল্প দামে ফ্রেম করাতে পারেন।

ব্যক্তিগত স্মৃতি এবং প্লান্ট সাজানো

শেলফে জিনিস রাখতে গিয়ে অনেকে ছোট ছোট শো-পিস গেঁথে ফেলেন। ফলাফল, ঘর ভারী আর চোখে বিরক্তিকর লাগে। বরং শেলফে ব্যালেন্স রাখুন। বই, একটি ছোট প্ল্যান্ট, ট্রাভেল স্মৃতি, ফটো ফ্রেম আর একটি মোমবাতি এই কয়েকটি উপাদানই যথেষ্ট। এতে শেলফ খুব নীট, স্টাইলিশ এবং ব্যক্তিত্বপূর্ণ দেখায়। ডেকোর মানে বেশি জিনিস নয়, সঠিক জিনিস সঠিক জায়গায়।

ঘরের পর্দা ও বেডশিট বাচাই করা

পুরো ঘর সাজানোর সবচেয়ে সহজ এবং তুলনামূলক কম খরচের উপায় হলো কালার থিম সেট করা। পর্দা আর বেডশিটের রঙ মিলিয়ে নিলে ঘর অসাধারণভাবে গুছানো দেখায়। উদাহরণ-

  • সাদা + জলপাই সবুজ = শান্ত
  • সাদা + বাদামি = ন্যাচারাল
  • ধূসর + নেভি ব্লু = আধুনিক

একটি রং বেশি ব্যবহার করবেন না। ২ বা ৩ রঙে পুরো ডেকর রাখলে ঘর আধুনিক এবং সিম্পল দেখায়।

দেয়ালে মিনিমাল আর্ট

লাইটিং সেটআপ

উষ্ণ আলো ব্যবহার করা

সাদা LED লাইট ঘর উজ্জ্বল করে কিন্তু আরামদায়ক করে না। এর বদলে Warm Yellow Tone লাইট ব্যবহার করলে ঘর মুহূর্তেই ক্যাফে বা কফি-শপের মতো উষ্ণ হয়ে ওঠে। শুধু বেডরুমে এক বা দুইটি উষ্ণ আলো লাগালে ঘরের পরিবেশ একদম বদলে যায়। এর জন্য খুব বেশি খরচও লাগে না। ২০০–৩০০ টাকায় ভালো Warm LED বাল্ব পাওয়া যায়।

ছোট টেবিল ল্যাম্প

ঘরের একটি শান্ত কোণা ডেকোর করার জন্য টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প বা স্ট্রিং লাইট খুব কার্যকর। এই লাইটগুলো ঘরে সফট শেড তৈরি করে, যা মানসিক প্রশান্তি আনে। সন্ধ্যায় লাইট জ্বালালে ঘর আরামদায়ক, উষ্ণ এবং বসে সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত মনে হয়। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে নরম আলো মনকে শান্ত করে।

প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করুন

দিনের আলো ঘরকে শুধু উজ্জ্বলই করে না, বরং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে। তাই ভারী, গাঢ় রঙের পর্দা ব্যবহার না করে হালকা কটন বা শিফন পর্দা ব্যবহার করুন। এতে আলো সুন্দরভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘর খোলা, স্বস্তিদায়ক ও পরিষ্কার দেখায়।

লাইটিং সেটআপ

ঘর পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ

দৈনিক ১০ মিনিট সময় দিয়ে ঘর গোছানো

দিন শেষে ১০ মিনিট সময় নিয়ে ঘর গুছিয়ে ফেললে ঘর সবসময় সুন্দর থাকে। প্রতিদিন অল্প করে পরিষ্কার করলে ঘর কখনো অগোছালো বা বিছিন্ন হয়ে যায় না। যেমন- চাদর ঠিক করা, কাপড় ভাঁজ করা, টেবিল পরিষ্কার করা, মেঝে ঝাড়া দেওয়া। নিয়মিত ছোট ছোট যত্ন ঘরকে দীর্ঘমেয়াদে আরামদায়ক এবং বাস উপযোগী করে তোলে।

কম জিনিস রাখুন

ভাড়া বাসায় ঘর সুন্দর রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো মিনিমালিজম। প্রয়োজনের বাইরে কিছু রাখবেন না। কম জিনিস রাখলে ঘর শুধু খোলা ও পরিচ্ছন্ন দেখায় না, বরং মনকেও শান্তি দেয়। অতিরিক্ত ডেকর বা ভরাট ঘর চোখ ও মাথা দুইকেই ক্লান্ত করে।

শেষ কথা

ভাড়া বাসা সাজানোর উপায় মূলত মন ও রুচির সমন্বয়। খুব বেশি খরচ করার দরকার নেই, দরকার শুধু পরিকল্পনা, রঙের সামঞ্জস্য, সঠিক আলো এবং মিনিমাল ডেকর। ছোট ছোট পরিবর্তনই ঘরের রূপ বদলে দেয়। ঘর সাজান আপনার মতো করে, কারণ ঘর শুধু থাকার জায়গা নয়, এটি আপনার মানসিক শান্তির কেন্দ্র।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *