মশা তাড়ানোর ১২ টি ঘরোয়া উপায়
মশা থেকে মারাত্মক ভয়ানক রোগ ছড়ায়। এটি বিভিন্ন ভাইরাসের বাহক। ভয়ানক এই প্রাণী ঘর থেকে তাড়ানোর ঘরোয়া টিপস শেয়ার করলাম।

বছরের যেকোনো সময়ে মশার উৎপাত আমাদের নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে বর্ষাকালে কিংবা সন্ধ্যার পর, মশা যেন হানা দেয় রীতিমতো দলবেঁধে। মশা তাড়ানোর উপায় দুইটি- ঘরোয়া এবং রাসায়নিক পদ্ধতি। বাজারে মশা তাড়ানোর নানা ধরনের স্প্রে, কয়েল বা মেশিন পাওয়া যায়। তবে এগুলোর রাসায়নিক গন্ধ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই আজ জানবো কীভাবে ঘরে বসেই প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়ে মশা দূর রাখা যায়। সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে মশা তাড়ানোর উপায়
কোনো প্রকার সাইড ইফেক্ট ছাড়া খুব সহজে প্রাকৃতিক নিময়ে ঘর থেকে মশা দূর করতে পারবেন। লবঙ্গ, তেজপাতা, কর্পূর, ন্যাপথলিন এবং নিম ও পুদিনা পাতার সাহায্য ঘর থেকে মশা তাড়ানো যায়। ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে মশা তাড়ানোর কয়েকটি টিপস শেয়ার করলাম।
লেবু ও লবঙ্গ
এই পদ্ধতিটি খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকর। একটি লেবু মাঝ বরাবর কেটে প্রতিটি ভাগে ৫-৬ টি লবঙ্গ গেঁথে নিন। তারপর এই লেবু ঘরের কোণায় কিংবা জানালার পাশে রেখে দিন। লবঙ্গের তীব্র গন্ধ এবং লেবুর রস একত্রে এমন এক গন্ধ তৈরি করে যা মশা সহ্য করতে পারে না।

তুলসী গাছ রাখুন ঘরের পাশে
তুলসী শুধু পবিত্র গাছই নয়, এটি মশা তাড়ানোর দারুণ একটি প্রাকৃতিক উপায়। ঘরের বারান্দা, জানালার পাশে বা যেখানে মশা বেশি আসে সেখানে একটি তুলসী গাছ রাখুন। তুলসী পাতা থেঁতো করে পানি দিয়ে সেদ্ধ করে সেই পানি স্প্রে হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। এতে মশা আসবে না ঘরে।
রসুনের ধোঁয়া
রসুন শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধেও বেশ উপযোগী। কয়েক কোয়া রসুন থেঁতো করে পানিতে সেদ্ধ করুন এবং ঠান্ডা হলে স্প্রে বোতলে ভরে ঘরের কোণায় স্প্রে করুন। ফলে রসুনের গন্ধে থাকা সালফার যৌগ মশা দূরে রাখে।

তেজপাতা
তেজপাতা দিয়ে বিভিন্ন ভাবে মশা তাড়ানো যায়। প্রথমত কয়েকটি তেজপাতা নিন। তেজপাতার গায়ে সামান্য ঘি মেখে দিন। তারপর দিয়াশলাই দিয়ে তেজপাতা ফুডিয়ে ফেলুন। তেজপাতার গন্ধে মশা ঘর থেকে পালাবে।
কয়েকটি তেজপাতা নিয়ে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। ফোটানো পানি একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে ঘরের বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করে দিন। তাহলে ঘর থেকে মশা বের হয়ে যাবে।

ল্যাভেন্ডার বা ইউক্যালিপটাস তেল
এসেনশিয়াল অয়েল গুলো শুধু ঘ্রাণই বাড়ায় না, মশা তাড়ানোর দারুণ উপায় হতে পারে। কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা ইউক্যালিপটাস তেল কিছুটা পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করুন ঘরের চারপাশে। চাইলেই তুলার বল এই তেলে ভিজিয়ে জানালার পাশে রাখতে পারেন।

কর্পূর এবং তেজপাতা
২/৩ টি কর্পূর গুঁড়ো করে নিন। গুঁড়ো করা কর্পূর একটি বাটিতে নিয়ে সামান্য পানি মিশিয়ে দিন। কর্পূর মেশানো পানি ঘরের কর্নারে রেখে দিন। কর্পূরের গন্ধে মশা চলে যাবে। কয়েকদিন পর পর পানি চেঞ্জ করে নিবেন।

ন্যাপথলিন
প্রথমে ন্যাপথলিন গুঁড়ো করে নিন। গুঁড়ো করা ন্যাফথলিন পানিতে মিশিয়ে নিন। তারপর তা ঘরের যে-সব স্থানে মশার উপদ্রব বেশি সেখানে স্প্রে করে দিন অথবা ঘরের চারপাশে স্প্রে করে দিন।
ন্যাপথলিন এবং কর্পূর
কর্পূর এবং ন্যাপথলিন গুঁড়ো করে তার সাথে পানি মিশিয়ে স্প্রে করুন। ঘর থেকে মশা মাছি খুব সহজেই পালিয়ে যাবে।
নিম তেল ও নারকেল তেলের মিশ্রণ
সম পরিমাণে নিম তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরের খোলা অংশে লাগাতে পারেন। এটি প্রাকৃতিক মশা নিরোধক হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের জন্যও উপকারী হবে।
আরও পড়তে পারেন:
তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর ৭টি উপায়
চায়না তেলাপোকা দূর করার ঘরোয়া ৭টি উপায়
মাছি তাড়ানোর ৭টি ঘরোয়া উপায়
রান্নাঘর থেকে তেলাপোকা তাড়ানোর উপায়
পুদিনা পাতার গন্ধ
পুদিনা পাতার ঘ্রাণ মশার কাছে অপছন্দনীয়। কিছু পাতা থেঁতো করে পানি ফুটিয়ে সেই পানি স্প্রে করলে ঘরের বাতাসে এক ধরনের সতেজ ঘ্রাণ ছড়াবে আর মশাও থাকবে দূরে।
মশা ধরার ফাঁদ
খালি বোতল কেটে তার নিচের অংশে চিনি, গরম পানি ও ইস্ট মিশিয়ে দিন। এটি মশাদের আকৃষ্ট করে এবং ফাঁদে ফেলে। ঘরে বসবাস করা মশা, মাছি এবং পাখাওয়ালা ছোট্ট কীটপতঙ্গ মারতে এই ফাঁদ ব্যবহার করতে পারেন।

পানি জমতে না দেওয়া
অবশ্যই আমাদের লক্ষ রাখতে হবে ঘরের মধ্যে কোনো পাত্রে যেন পানি না জমে থাকে। মশার জন্ম হয় ময়লাযুক্ত পানি থেকে। এটি খেয়াল রাখতে হবে।
শেষকথা
মশা থেকে সৃষ্ট রোগব্যাধি মানুষের প্রাণনাশের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। যেমন:- ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ আরো বিভিন্ন রোগ। এসব অসুখ থেকে রক্ষা পেতে চাইলে অবশ্যই ঘর থেকে মশা তাড়াতে হবে।