ক‍্যাকটাস গাছের যত্ন ও উপকারিতা

ঘর সাজাতে অনান্য ইনডোর প্লান্টের সাথে রাখতে পারেন একটি ক্যাকটাস গাছ। এটি ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

ক‍্যাকটাস গাছের যত্ন ও উপকারিতা

ক‍্যাকটাস খুবই জনপ্রিয় একটা গাছ। এটি বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য রাখা হয়। বারান্দা অথবা জানালার পাশে ক্যাকটাস রাখতে পারেন। ক‍্যাকটাসের প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রজাতির জাত দেখা যায়। মরুভূমির উত্তপ্ত গরমে এই গাছ পানি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকতে পারে। সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যায় এই গাছ বেঁচে থাকে দীর্ঘদিন।

ক্যাকটাস গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি একটি ভেষজ ইনডোর প্লান্ট। ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্যাকটাস গাছ বিভিন্ন রোগব্যাধির ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অনেক প্রজাতির ক্যাকটাস গাছ রয়েছে। ক্যাকটাস গাছের উপকারিতা এবং যত্ন সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করলাম৷

ক‍্যাকটাস গাছের যত্ন


ক্যাকটাস গাছের খুব বেশি যত্ন নিতে হয় না। অল্প যত্নে অনেক দিন ভালো থাকে ভেষজ এই ইনডোর প্লান্ট। পর্যাপ্ত আলো বাতাস, নিয়মিত পানি দেওয়া এবং রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে পারলে এই গাছ বেঁচে থাকে অনেক দিন।

আলো

পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ক্যাকটাস গাছের জন্য উপকারী। ঘরের যে-সব স্থানে সূর্যের আলো আসে সেখানে ক্যাকটাস গাছ রাখতে পারেন। যেমন- জানালার পাশে, বারান্দায় রাখলে ভালো হয়। দিনে কমপক্ষে ৫ ঘন্টা সূর্যের আলোতে রাখতে হবে এই গাছ।

নিয়মিত পানি দেওয়া

ড্রেনেজ যুক্ত পাত্রে ক্যাকটাস গাছ রাখতে হবে। অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারেনা এই গাছ। গরমকালে ১৫-২০ দিনে একবার পানি দিন। গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে পুরো মাটি ভিজিয়ে দেওয়া উত্তম। পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। এজন্য পাত্রের নিচে ছিদ্র করে দিন।

ক‍্যাকটাস গাছের যত্ন

সার প্রয়োগ

ক্যাকটাস গাছ বেড়ে উঠার জন্য সার প্রয়োগ করা জুরুরি। বছরে ২-৩ বার সার করতে হবে। গরমকালে সার দিতে হবে। শীতের সময় মাটির আর্দ্রতা বেশি থাকায় এই সময় সার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্যাকটাস গাছে সাকুলেন্ট সার অথবা সাধারণ গাছের তরল সারের সাথে তিন গুন পানি মিশিয়ে মাটি হালকা ভিজিয়ে দিতে হবে।

ক‍্যাকটাস গাছের যত্ন

পোকামাকড় বা রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ

ক্যাকটাস গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ে আক্রমণ করে। মিলিবাগ, ফাঙ্গাস, স্কেল ইনসেক্ট সহ আরো অনেক পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে। পানি বেশি দিলে, মাটিতে ময়লা আবর্জনা জমলে এবং আলো বাতাস কম থাকলে এসব পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে। এসব পোকামাকড় দূর করতে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলুন। পানি সাথে ডিটারজেন্ট অথবা নিম তেল মিশিয়ে গাছে স্প্রে করুন। পোকামাকড় বা রোগবালাই বেশি আক্রান্ত হলে রাসায়নিক সার ব্যবহার করুন।

ইনডোর প্লান্ট সম্পর্কে আরও পড়তে পারেন: স্নেক প্লান্টের উপকারিতা ও যত্ন

তাপমাত্রা

ক্যাকটাস গাছের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি হলে পাতা পুড়ে যেতে পারে তাই এই তাপমাত্রায় ক্যাকটাস গাছ কিছুটা ছায়া যুক্ত স্থানে রাখুন। গ্রীষ্মকালের আবহাওয়া ক্যাকটাস গাছের জন্য সব থেকে বেশি উপযুক্ত।

ক‍্যাকটাস গাছের উপকারিতা

ক‍্যাকটাস গাছের উপকারিতা অনেক। এটি অনেক রোগের সমাধান দিয়ে থাকে। এটি ভেষজ ঔষুধের ন্যায় কাজ করে। প্রাচীন কালের মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে মানুষ আধুনিক ভাবে জীবন যাপন করে। কোন গাছের কি গুনাগুন আছে তা সম্পর্কে মানুষ জানে।

  • ক‍্যাকটাস গাছে ফাইবার ও উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদান থাকে।
  • চোখের দৃষ্টি ভালো রাখতে ক‍্যাকটাসে আছে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ থাকায় রাতকানা রোগ হয়না। চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে। সর্বোপরি চোখের জন‍্য ক‍্যাকটাস একটি খুবই উপকারী গাছ।
  • ক‍্যাকটাসে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ক‍্যাকটাস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী।
  • ক‍্যাকটাসে আছে উচ্চ মাত্রায় অধিক পরিমানে খনিজ, আয়রণ, ম‍্যাগনেশিয়াম ফাইবার। ফাইবার হজম শক্তি বজায় রাখে বলে কোষ্ঠ‍্যকাঠিন‍্য হয় না।
  • ক‍্যাকটাসে সোডিয়াম, ক‍্যালসিয়াম, ম‍্যাগনেশিয়াম থাকায় মাংস পেশী ব‍্যাথ‍া হয় না।
  • ক‍্যাকটাস ওজন কমাতে সাহায‍্য করে। কারন ক‍্যাকটাসে ক‍্যালরির পরিমান কম থাকায় আমরা যে পরিমান খাবার গুলো খায় তা থেকে চর্বি জমা হতে পারেনা । ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ক‍্যাকটাসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি-অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খনিজ ম‍্যাগনোজ। এগুলোর সমন্বয়ে এক গ্লাস শরবত পান করলে মাথা ব‍্যাথা সারাতে দ্রুত কার্যকরী।
  • ক‍্যাকটাস ফল স্ট্রোক বা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ক‍্যাকটাস ক‍্যান্সারের ঝুকি কমাতেও সহায়তা করে।

ক‍্যাকটাস গাছের মাটি ক‍িভাবে তৈরি করতে হবে

ক‍্যাকটাস রোপনে প্রথমেই এর মাটি তৈরি করতে হবে। কারন মাটি যদি ভালো করে তৈরি করা না যায় তাহলে গাছ পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

  • মাটি তৈরি করতে একভাগ লাল বালি, এক ভাগ সাধারণ মাটি, এক ভাগ ইটের বালি মিশিয়ে নিতে হবে।
  • হলুদ বালি বা লাল মোটা বালি, নূরি পাথর এগুলোও চারা রোপনের জন‍্য বেশ উপযোগী।
  • ক‍্যাকটাস রোপনে শুধু মাটি ব্যবহার করা যাবে না। এতে গাছ পঁচে যাবে।
  • ক‍্যাকটাস গাছ রোপনের জন‍্য প্লাস্টিক চিনামাটি কিংবা মাটির টব ব‍্যবহার করতে হবে।
  • ক‍্যাকটাস রোপনে সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে গরমের সিজন। মার্চ-এপ্রিল মাস এর জন‍্য খুব উপযোগী সময়।
  • ক‍্যাকটাস গাছের মাটি কিছু দিন পর পর আছরে দিতে হবে।

শেষ কথা

ক‍্যাকটাস গাছ আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি যেমন তার সৌন্দর্য বজায় রাখছে তেমনি মানুষের উপকারে আসছে। তাই এর সঠিক যত্ন নিতে হবে। এই গাছের বিস্তৃতি বাড়ানো খুবই সহজ। একের থেকে অধিক গাছ সহজেই করা যায়, শুধু মাত্র কিছু নির্দিষ্ট নিয়মে। পরিশেষে এটায় বলা যায় ক‍্যাকটাস একটি অতুলনীয় গুরুত্বপূর্ণ গাছ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *