নতুন সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা
নতুন সংসারে প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করা। নিজের নিত্যদিনের এই জিনিসপত্র না হলে নতুন সংসার সাজানো কঠিন হয়ে যায়।

বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে আমাদের নতুন সংসারের সূচনা হয়। নতুন সংসার শুরু করার জন্য সংসারের জিনিসপত্র এর প্রয়োজন হয়। নতুন সংসারে সব ধরনের জিনিসই লাগে। বেডরুম, ড্রয়িং রুমসহ সব রুমের জন্য আলাদা আলাদা জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়।
একটি নতুন সংসার সাজাতে আসবাবপত্র থেকে শুরু করে টুকিটাকি সব জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে গুরুত্বের উপর নির্ভর করে জিনিসপত্র সিলেক্ট করতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে শান্তি বজায় রাখার জন্য এমন অনেক জিনিসপত্র প্রয়োজন হয়। নতুন সংসারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তালিকা সম্পর্কে কিছুটা আইডিয়া দিলাম।
নতুন সংসারের জিনিসপত্র
বেডরুম
নতুন সংসারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো শোবার ঘর। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে এখানে শান্তিতে বিশ্রাম নিতে হবে। বিছানা ভালো না হলে ঘাড় ব্যথা, কোমর ব্যথা, ভালো ঘুম না হওয়া এগুলো খুবই সাধারণ। তাই বিছানা বাছাই করার সময় কাঠ বা স্টিলের মজবুত ফ্রেম এবং আরামদায়ক গদি অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। পাশাপাশি বালিশ ও বেডশীট অন্তত ২-৩ সেট থাকা উচিত, যাতে ধোয়া-মোছা করলেও সমস্যা না হয়। আলমারি ও ড্রেসিং টেবিল ঘরকে গোছানো রাখে, আর পর্দা ঘরে গোপনীয়তা ও সৌন্দর্য দুটোই যোগ করে। প্রথমে বেসিক জিনিসগুলোতে বিনিয়োগ করুন, পরে ধাপে ধাপে সাজসজ্জার দিকে মনোযোগ দিন।
বিছানা
নতুন সংসারের জিনিসপত্র এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান হলো একটি ভালো বিছানা। সস্তা বা অস্বস্তিকর বিছানা ব্যবহার করলে ঘুম নষ্ট হয়, ফলে সারাদিন বিরক্তি আর ক্লান্তি থেকে যায়। তাই বিছানা বেছে নিতে হলে মানসম্মত স্প্রিং বা ফোম গদি কিনুন। ফ্রেমের ক্ষেত্রে কাঠ টেকসই হলেও স্টিলের ফ্রেম মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।
বালিশ ও বেডশীট
কমপক্ষে ২-৩ সেট বালিশ ও বেডশীট রাখার সুবিধা হলো, এক সেট ধোয়ার সময় আরেক সেট ব্যবহার করা যাবে। তুলার কাপড়ের বেডশীট ঘুমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখে।
আলমারি/ওয়ারড্রোব
কাপড়-চোপড় গোছানো না থাকলে নতুন সংসারের ঘর দ্রুত অগোছালো হয়ে যায়। ছোট আলমারি শুরুতে যথেষ্ট, তবে লক সিস্টেম থাকা ভালো। অনেক দম্পতি প্রথমে আলমারি না কিনে ঝুল ঝুল কাপড় রাখেন, যা দেখতে বাজে লাগে এবং ধুলোও পড়ে।
ড্রেসিং টেবিল
নতুন সংসারে সাজগোজের জন্য ড্রেসিং টেবিল খুব দরকার। আয়না, ড্রয়ার ও ছোট স্টোরেজের জন্য ড্রেসিং টেবিল সিলেক্ট করতে পারেন।
পর্দা
পর্দা শুধু আলো আটকানোর জন্য নয়, ঘরের সৌন্দর্যও বাড়ায়। জানালার পর্দা মশা থেকে সুরক্ষার জন্য খুবই কার্যকর। শোবার ঘরে নেট না থাকলে মশার ঝামেলায় শান্তি পাওয়া যায় না।

ড্রইং রুম
ড্রইং রুম হলো অতিথির প্রথম ইমপ্রেশন তৈরি করার জায়গা। ড্রইং রুমের সাজসজ্জা দেখে পুরো সংসারের পরিচ্ছন্নতা বোঝা যায়। নতুন সংসারে বড়সড় সোফা সেট কেনা বাধ্যতামূলক নয়, তবে টেকসই ও আরামদায়ক চেয়ার বা সোফা নিলে ভালো হয়। একটি সেন্টার টেবিল, ওয়াল ক্লক এবং হালকা ডেকর ঘরের পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে। অনেকেই শুরুর দিকে অতিরিক্ত সাজসজ্জা কিনে ফেলে, পরে সেগুলো জায়গা দখল করে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। প্রথমে প্রয়োজনীয় জিনিস রাখুন, পরে ধীরে ধীরে শোপিস বা ওয়াল ডেকর যোগ করুন। এতে ঘর সবসময় পরিপাটি ও ব্যবহারোপযোগী থাকবে।
সোফা সেট / চেয়ার
অতিথি আপ্যায়নের মূল আসন। প্রথমে ছোট সেট কিনলেও মানসম্মত কাঠ বা মজবুত ফ্রেমের সোফা নেওয়া ভালো। আরামদায়ক কুশনযুক্ত সোফা নির্বাচন করাই ভালো।
সেন্টার টেবিল
ড্রইং রুমের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং ব্যবহারিক দিক থেকেও দরকারি। এখানে চা, কফি বা নাস্তা পরিবেশন করা যায়। অনেক সময় আমি দেখেছি সেন্টার টেবিল না থাকলে অতিথিকে অস্বস্তি হয়।
কার্পেট
শুধু সাজসজ্জা নয়, বরং মেঝেকে ধুলো-ময়লা থেকে রক্ষা করে। হালকা রঙের কার্পেট এড়িয়ে চলতে, কারণ দ্রুত ময়লা হয়।
শোকেস/টিভি স্ট্যান্ড
ড্রইং রুম গোছানো রাখতে শোকেস বা টিভি স্ট্যান্ড ভালো ভূমিকা রাখে। বই, শোপিস ও টিভি এক জায়গায় সাজাতে সুবিধা।

ডাইনিং রুম
নতুন সংসারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ডাইনিং রুম। একসাথে বসে খাওয়ার অভ্যাস সংসারে ভিন্ন ধরণের বন্ধন তৈরি করে। তাই একটি মাঝারি আকারের ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার নতুন সংসারের জন্য অপরিহার্য। সস্তার প্লাস্টিক টেবিল ব্যবহার করেলে তা দ্রুত পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। ভালো কাঠ বা স্টিলের ফ্রেমের টেবিল দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি খাবার পরিবেশনের জন্য প্রয়োজন প্লেট, গ্লাস, কাপ, কাঁটা-চামচের একটি ভালো সেট।
ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার
একসাথে খাওয়ার অভ্যাস সংসারে বন্ধন তৈরি করে। তাই একটি ভালো মানের ডাইনিং টেবিল অপরিহার্য। কাঠের ডাইনিং টেবিল দীর্ঘস্থায়ী হয়। প্লাস্টিক বা বিভিন্ন ডিজাইনের ডাইনিং টেবিল দিয়ে ডাইনিং রুম সাজানো যায়।
প্লেট, গ্লাস, কাপ, কাঁটা-চামচ সেট
অতিথি এলে যাতে সমস্যা না হয় তাই শুরুতেই অন্তত ৬ জনের জন্য সম্পূর্ণ সেট রাখা ভালো। মজবুত মেলামাইন বা স্টেইনলেস স্টিলের সেট দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য।
জগ ও ফ্লাস্ক
খাবার টেবিলে পানি বা পানীয় পরিবেশনের জন্য জগ অপরিহার্য। ফ্লাস্ক রাখলে চা বা কফি অনেকক্ষণ গরম থাকে, যা অতিথি আপ্যায়নে বেশ কাজে লাগে।
ডাইনিং ম্যাট ও টেবিল কভার
এগুলো ব্যবহার করলে টেবিল পরিষ্কার রাখা সহজ হয়। ওয়াশেবল ম্যাট ব্যবহার করার পরামর্শ দিই।

রান্নাঘর
রান্নাঘর হলো সংসারের হৃদয়। এখানে সময় কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলে সংসারের পরিবেশও আনন্দময় হয়। রান্নাঘর সাজানোর ক্ষেত্রে কম কিনুন, কিন্তু ভালো মানের কিনুন। একটি ভালো হাড়ি-পাতিল, কড়াই, তাওয়া এগুলো ছাড়া রান্না অসম্ভব। পাশাপাশি একটি রাইস কুকার ও প্রেসার কুকার নতুন সংসারের জীবনকে অনেক সহজ করে দেয়। রান্নার সময় ব্লেন্ডার বা গ্রাইন্ডার ব্যবহার করলে সময় বাঁচে। ছুরি, বঁটি, কাটিং বোর্ড রান্নাঘরের অপরিহার্য সঙ্গী।
হাড়ি-পাতিল, কড়াই, তাওয়া
রান্নার মূল উপকরণ এগুলো ছাড়া সংসার কল্পনা করা যায় না। টেকসই স্টেইনলেস স্টিল বা নন-স্টিক কড়াই ব্যবহার করলে রান্না সহজ হয়।
রাইস কুকার / প্রেসার কুকার
আজকাল রান্নাঘরে সময় বাঁচানোর সেরা উপকরণ। রাইস কুকার শুধু ভাত নয়, সবজি, খিচুড়ি বা স্যুপ রান্নাতেও বেশ কার্যকর।
ব্লেন্ডার / গ্রাইন্ডার
আধুনিক রান্নাঘরে এই যন্ত্রগুলো সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচায়। বিশেষ করে বাচ্চা থাকলে ব্লেন্ডারের ব্যবহার বাড়ে।
ছুরি, বঁটি, কাটিং বোর্ড
কাজের রান্নাঘরে ধারালো ছুরি অপরিহার্য। সবসময় আলাদা কাটিং বোর্ড ব্যবহার করবেন। একটি সবজির জন্য আরেকটি মাছ-মাংসের জন্য। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা সহজ হয়।
মশলার ডিব্বা
রান্না করার সময় মশলা হাতের কাছে থাকলে সুবিধা হয়। একটি ভালো মশলার ডিব্বা হলে রান্নাঘরও গোছানো থাকে।
ফ্রিজ (রেফ্রিজারেটর)
নতুন সংসারে একদম অপরিহার্য। খাবার টাটকা রাখা ও অপচয় রোধে এর কোনো বিকল্প নেই।
গ্যাস চুলা/ইন্ডাকশন চুলা + সিলিন্ডার/লাইন
রান্নাঘরের প্রাণ হলো চুলা। এখন অনেকেই ইন্ডাকশন ব্যবহার করছেন কারণ এটি সাশ্রয়ী ও নিরাপদ।
থালা-বাটি ও স্টোরেজ কন্টেইনার
অতিরিক্ত প্লাস্টিক বা গ্লাস কন্টেইনার রাখলে চাল, ডাল, মশলা সবকিছু গোছানো থাকে। এয়ারটাইট কন্টেইনার ব্যবহারের করার চেষ্টা করবেন।

বাথরুম
নতুন সংসারে পরিচ্ছন্ন বাথরুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই এই জায়গাটি এড়িয়ে যান, কিন্তু পরে বুঝতে পারেন এর গুরুত্ব কতটা। বালতি-মগ, শাওয়ার, আয়না এগুলো বাথরুমকে ব্যবহারোপযোগী করে তোলে। টাওয়েল সেট অন্তত ২-৩টা রাখতে হবে, যাতে সবসময় শুকনা টাওয়েল ব্যবহার করা যায়।
বালতি ও মগ
বাংলাদেশি পরিবারের জন্য এখনো অপরিহার্য। অনেকেই শুরুর দিকে শুধু শাওয়ার ব্যবহার করেন, পরে বুঝতে পারেন বালতি-মগ না থাকলে অসুবিধা হয়।
শাওয়ার বা হ্যান্ড শাওয়ার
আধুনিক বাথরুমে এগুলো না থাকলে ব্যবহার অসুবিধাজনক হয়ে যায়। হ্যান্ড শাওয়ার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অনেক বেশি কার্যকর।
আরও পড়তে পারেন:
ঘর সাজানোর টুকিটাকি জিনিসপত্রের তালিকা
আয়না
বাথরুমে একটি আয়না থাকলে প্রতিদিনের টাচআপ সহজ হয়।
টাওয়েল সেট
ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অন্তত ২-৩টা আলাদা টাওয়েল থাকা উচিত।
টুথব্রাশ হোল্ডার, সাবান রাখার ট্রে
ছোট জিনিস মনে হলেও এগুলো ছাড়া বাথরুম সবসময় অগোছালো ও ভেজা হয়ে যায়।
ওয়াশিং বাস্কেট
নোংরা কাপড় এক জায়গায় রাখলে ঘরের বাকি অংশ অগোছালো হয় না।

ইলেকট্রনিক্স/ অন্যান্য
আজকের দিনে ইলেকট্রনিক্স ছাড়া সংসার কল্পনাই করা যায় না। ফ্যান, টিভি, আয়রন, ফ্রিজ এসব জিনিস নতুন সংসারে খুব দরকার হয়। প্রথম দিকে অনেক বেশি ইলেকট্রনিক্স কেনার দরকার নেই, তবে কয়েকটি বেসিক জিনিস অবশ্যই থাকা উচিত। আয়রন ছাড়া কাপড় গোছানো রাখা যায় না। চার্জার, মাল্টি-প্লাগ, এক্সটেনশন বোর্ড ছোট জিনিস হলেও প্রতিদিনের জীবনে ভীষণ জরুরি।
- ফ্যান / এসি
- টিভি
- ইলেকট্রিক আয়রন ও আয়রন টেবিল
- মোবাইল চার্জার, মাল্টি-প্লাগ, এক্সটেনশন বোর্ড
- লাইট, টিউব/বাল্ব, ইমার্জেন্সি লাইট
- ইনডোর প্ল্যান্ট
- শোপিস / ফটো ফ্রেম
- দরজা-জানালার পর্দা
- ঝাড়ু, মপ, ডাস্টবিন, ডিটারজেন্ট
শেষ কথা
নতুন সংসার গোছাতে সংসারের জিনিসপত্র চেয়ে ধৈর্য সবচেয়ে বড় সম্পদ। সব একসাথে কিনতে গেলে খরচ বেড়ে যায় এবং অনেক জিনিস অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাই ধাপে ধাপে প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিস সংগ্রহ করুন, আর মানের সঙ্গে কোনো আপস করবেন না।